একাত্তর আমাদের অস্তিত্ব: মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১১ ডিসেম্বর) : ‘একটা কথা আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্ব। এ কথাটা খুব জোরে সোরে মনে রাখবেন। আজকে আমি পত্রিকায় দেখলাম, ১৯৭১ সালের প্রজন্ম নাকি নিকৃষ্টতম প্রজন্ম। কোন সাহসে এই কথা বলার দুঃসাহস দেখান তারা? এই ঔদ্ধত্য কিভাবে দেখান তারা?’
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিকেল ৪টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
অপশক্তি রুখতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রিয় ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘খুব শিগগিরই’ দেশে ফেরার বার্তা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব শিগগিরই আমাদের মাঝে আসবেন। আমাদের নেতা যেদিন আমাদের মাঝে আসবেন, বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। সেদিন গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে যাবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের নেতার যে চিন্তাভাবনা তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, এবারের নির্বাচন সেই আওয়ামী লীগের আমলের নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন হবে সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে হলে মানুষের মন জয় করে তাদের ভোটকেন্দ্র নিয়ে আসতে হবে। ধানের শীষের পক্ষে তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে হবে। কে নমিনেশন পেলো কি পেলো না সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার দল জনগণের জন্য কি নিয়ে আসছে তা জনগণকে জানাতে হবে।’
এই লড়াই নির্বাচনে জয়ের লড়াই উল্লেখ তিনি বলেন, ‘এখনকার লড়াই হচ্ছে আমাদের এই নির্বাচনে জয়ের লড়াই। এ নির্বাচনে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে জয় লাভ করতে হবে। যাতে করে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রচারণা হচ্ছে, হতে থাকবে। কিন্তু সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বিএনপি কোনদিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে এই দেশের জনগণের দল, বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের সংগ্রামের দল, এই কথাগুলো সবসময় মাথার মধ্যে রাখবেন। আর অন্য কোন কিছু আপনাদেরকে সাফল্য দেবে না। আপনাদেরকে সাফল্য দেবে আপনাদের ঐক্য, ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য। আপনাদের যে চেতনা সামনের দিকে যাওয়ার, জাতীয়তাবাদী দর্শনে আমরা দীক্ষিত হয়েছি, আমরা যে গণতন্ত্রের দর্শনে দীক্ষিত হয়েছি সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার এই চেতনা।’
মহাসচিব আরও বলেন, ‘এই দেশে সংস্কারের জন্ম দিয়েছে বিএনপি। ১৯৭৫ সালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের শাসনভার গ্রহণ করে শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশালতন্ত্র বিলুপ্ত করেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীন বিচারবিভাগ গড়ে তোলেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। তেমনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এখানে যেসব আলোচনা হবে শুধু শুনবেন আর নোট নেবেন, তা হবে না। এগুলোকে জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে হবে যে আমরা এই কাজগুলো করতে চাই। এটাই যদি আপনারা করেন তাহলে নিশ্চয়ই জনগণ আপনাদের দিকে আকৃষ্ট হবে। আপনার জনগণকে উইনওভার করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের জীবনটাই হচ্ছে সংগ্রাম। তেমনি একটা জাতিকে উপরে উঠতেও তাকে সংগ্রাম করেই উঠতে হয়। আমরা সেটা বারবার করেছি। বারবার আমাদের জনগণ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। এইবার চব্বিশের জুলাই যুদ্ধে অনেকে প্রাণ দিয়েছে। একাত্তরেও আমরা যুদ্ধ করেছি। এ সকল কিছুকে এক করে আমাদের সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা এই লড়াইয়ে জয় লাভ করার শপথ গ্রহণ করি।’
বিএনপি মহাসচিব একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া চান।
‘দেশ গড়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির অন্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি।
এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠনও অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।
মনোয়ারুল হক/
