রিমান্ড শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্র কারাগারে

মনির হোসেন মিন্টু, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (৯ আগষ্ট ২০১৮) : পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের পৃথক দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ৯ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই আদেশ দেন।

এর আগে পুলিশ দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাঁদের আদালতে হাজির করে। ছাত্রদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদের জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ সময় ছাত্রদের অভিভাবকেরা আদালতের এজলাসে ভিড় করেন। ছাত্রদের রাখা হয়েছিল আদালতের হাজতখানায়। বিকেলে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে গত মঙ্গলবার এই ২২ ছাত্রর প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেপ্তার আসামিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইষ্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাকের ছাত্র। এর মধ্যে, বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।

বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ছাত্রের ব্যাপারে আদালতকে জানিয়েছে, আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা তাঁদের নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। মামলার ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অপরদিকে গ্রেপ্তার ৮ ছাত্রের ব্যাপারে ভাটারা থানা-পুলিশ আদালতের কাছে দাবি করে, গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

ছাত্রদের জামিন না দিতে উভয় থানা-পুলিশই আদালতকে বলে, মামলার তদন্তের জন্য পুনরায় তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে।

ছাত্রদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর কিংবা পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। গ্রেপ্তার ছাত্র ফয়েজ আহম্মেদ আদনানের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি নিজে দেখেছেন, পুলিশ কীভাবে ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্র অথচ পুলিশ মামলায় তা উল্লেখ করেনি। মামলার এজাহারের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছে, তাতে এসব শিক্ষার্থী সায় দিয়েছে। যারা ভাঙচুর করল পুলিশ তাঁদের ধরল না।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর আইনজীবী আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া কাগজ জমা দিয়ে বলেছেন, তাঁরা কোনো আন্দোলনে ছিল না। কোনো ভাঙচুর করেনি। তাঁরা সেদিন ক্লাস করেছে। গ্রেপ্তার ছাত্র আমিনুল, হাসানুজ্জামাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর আইনজীবী আদালতকে জানান, আগামী সপ্তাহে তাঁদের পরীক্ষা আছে। জামিন না পেলে তাঁদের শিক্ষা জীবন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আর মাসাদ মরতুজা বিন আহাদের আইনজীবী কামরুদ্দিন আদালতকে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রকে পুলিশ সেদিন মারধর করেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। হাত ও ঘাড়ে জখম হয়েছে। আদালত পরে এই ছাত্রকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে আরও দাবি করেন, যারা হামলা করেছিল তাঁদের গ্রেপ্তার না করে নিরীহ এসব ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে মারধোর করেছে পুলিশ।

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ ছাত্র হলেন, রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্ররা হলেন, আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ