তার নীল ঠোঁটে চুমু দিয়েছিলেন মা

 

 

 

প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা : বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মহানগর পিপির দায়ের করা অভূতপূর্ব রিভিশন শুনানিতে এক আবেগঘন পরিবেশের অবতারণা হয়। এদিন এজলাসে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী।
রিভিশন শুনানির শেষদিকে নীলা চৌধুরী বিচারকের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন কিছু বলার জন্য। বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা প্রথমে তাকে ওই সুযোগ দিতে না চাইলেও পরে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদের অনুরোধে সুযোগ পান।
সালমান শাহর মৃত্যুদিনের ঘটনা নিয়ে প্রায় ২০ মিনিট এক আবেগময় বক্তব্য দেন নীলা চৌধুরী। বক্তব্যের মাঝে মাঝেই এমন সব চাঞ্চল্যকর বিষয় তুলে ধরেন যেগুলো প্রকাশ করার কারণে নিজের জীবনাশঙ্কার কথাও ব্যক্ত করেন।
বক্তব্যে আবেগ-অনুভূতি, অপত্য পুত্রস্নেহ এবং আইনগত ও তদন্তের অনেক ফাঁক ফোঁকরও তুলে ধরে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন নীলা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ওইদিন তার স্বামী যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনিও যান সালমানের বাসায়। গিয়ে দেখেন সালমানের শরীরে তেল ঘষছে দু’জন। ওই সময় তার পরনে একটি শর্টপ্যান্ট, নীল রঙের আন্ডাওয়্যারটির প্রান্ত চোখে পড়ছিল, গায়ে হলুদ গেঞ্জি, হাতে দেড় লাখ টাকা দামের ঘড়ি এবং গলায় কয়েক ভরি ওজনের লকেটযুক্ত একটি সোনার চেইন। তিনি ভাবতেই পারছিলেন না ছেলে মারা গেছে। দেখছিলেন ছেলের ঠোঁট দুটো নীল হয়ে গেছে। তিনি বারবার ডাকছিলেন, ‘ইমন! ওঠো বাবা ওঠো। আমি তোমার মা বলছি। তোমার কী হয়েছে বাবা!’ একথা বলেই তিনি সালমানের নীল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে চুমু দিয়েছিলেন।
অনেক কথার শেষে নীলা চৌধুরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারকের কাছে মামলাটি তদন্তের একটি আদেশ দেয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারও সন্তান আছে, যদি এই সুযোগ যদি না দেন তবে কেয়ামতের দিন বিচারক এ জন্যে দায়ী থাকবেন।‘
এ নিয়ে মোট তিনটি ধার্য তারিখে একটি বিষয়ের উপর রিভিশন শুনানি হলেও বিচারক কোন আদেশ না দিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
এদিনও সালমান শাহরা ভক্তরা ব্যানার নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের খোলা চত্বরে বিচার চেয়ে বিক্ষোভ দেখায় এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর, ১৩ অক্টোবর, এবং ২৯ সেপ্টেম্বর এই রিভিশন মামলায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুল্লা আবু উপস্থিত থাকলেও তিনি কোন কথাই বলেননি। তার পক্ষে শুনানি করেন, সাবেক মহানগর পিপি ও বিশিষ্ট আেইনজীবী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী। নীলা চৌধুরীর পক্ষে অন্ততঃ ৫ জন নিয়োজিত আইনজীবী ও তাদের সহযোগীরা এবং আদালতে উপস্থিত জনা পঞ্চাশেক আইনজীবীর সহানুভূতি থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে (মহানগর পিপি আব্দুল্লা আবুর পক্ষে) অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী একাই লড়ে যান অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএম আাদলতের সামনে দাঁড়িয়ে এই রিভিশন দায়ের করায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবুর বিরুদ্ধে আসামিদের পক্ষাবলম্বনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন নিহতের মা নীলা চৌধুরী।

ওইদিন সালমান শাহ হত্যা মামলায় র‌্যাবের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন দায়ের করায় থেমে যায় তদন্ত।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের ১১/বি নিউস্কাটন রোর্ডের স্কাটন প্লাজার বাসান নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিংসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

 

সুত্রঃ

প্রিয়লাল সাহা,

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ