চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে ইসির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২১ ডিসেম্বর) : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতা প্রতিরোধে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যারা ভয় ও আতঙ্ক ছড়াতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে নির্বাচনি আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে দিনব্যাপী পর্যালোচনা বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন থেকে নিয়মিত যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে। চোরাগোপ্তা হামলা পরাজিতদের কৌশল। শহর এলাকাকে টার্গেট করে ভয় সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এ সব চক্র শনাক্ত করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। এই শোক ও সংকটকে শক্তিতে পরিণত করে আমরা সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’

ইসি সানাউল্লাহ জানান, ‘নির্বাচনি পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। এ জন্য যা করা দরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা করবে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি এবং চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এসব অভিযান সম্পর্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এই একটি ঘটনায় নির্বাচনী উৎসবের আমেজ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। তবে যারা উৎসবমুখর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। যারা নির্বাচন ও মানুষের নিরাপত্তা নষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এর আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রবিবার বিকেল ৩টার দিকে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনী প্রধান বা তাদের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে সিইসির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা। তফসিল ঘোষণার পর এটি ছিল তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে কমিশনের প্রথম বৈঠক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, যেসব প্রার্থী নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মনে করছেন, তারা পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু ঘটনা থাকলেও সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মূলধারার রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

ইসি সানাউল্লাহ আরও জানান, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মূলধারার কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে একটি বিশেষ চক্র শহর এলাকায় টার্গেটেড হামলা করছে। এছাড়া প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে হামলার ঘটনাকে ভ্যান্ডালিজম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জনকে চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সানাউল্লাহ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সেনাবাহিনী মোট এক লাখ সদস্য মোতায়েন করবে। যার এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে মাঠে আছে, বাকিদের দ্রুত মোতায়েন করা হবে। সেই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে সমন্বয় সেলের মাধ্যমে বাহিনীসমূহ ও ম্যাজিস্ট্রেটরা একসঙ্গে কাজ করবেন। কমান্ড ও কন্ট্রোল নিয়ে টেকনিক্যাল আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে, বলে জানান তিনি।’

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ