দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বাস্তবসম্মত নয় : সিপিডি 

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১০ অক্টোবর) : বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে বরং বিদ্যমান এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা উচিত।

বাংলাদেশে সংসদীয় জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এক জাতীয় সংলাপে এই মত প্রকাশ করেছেন সিপিডির গবেষকরা। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি। সংসদীয় সংস্কার ও জবাবদিহিবিষয়ক একটি গবেষণা শেষে সিপিডি অন্তর্বর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছে, ঐকমত্যের চূড়ান্ত তালিকা থেকে ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন’ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি যেন বাদ দেয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম আহমেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার ধারণা যেমন, বাইক্যামেরালিজম, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব কার্যকর নয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিনের দলীয় আনুগত্য, পৃষ্ঠপোষকতা এবং ‘বিজয়ী সব পায়’ রাজনীতির সংস্কৃতিতে এসব প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী হয়ে থাকে। এতে জবাবদিহি বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জায়গায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সংস্থাটি মনে করে, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছাড়া শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যকর জবাবদিহি আনতে পারবে না। সে কারণে উচ্চকক্ষ গঠন না করে বিদ্যমান সংসদকেই কার্যকর করার ওপর জোর দিতে হবে।

সংস্থাটি সংসদীয় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে বিরোধীদলীয় এমপিদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ, রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকারকে আর্থিকভাবে আরও স্বনির্ভর করা, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দলত্যাগ রোধে আইনি সংস্কার।

সিপিডি মনে করে, শাসকদল যেন নির্বাহী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে, এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সাংবিধানিক পদে সরকারের নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। তবে এসব নিয়োগ সংসদীয় পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখতে হবে।

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদের আগে ও পরে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় পরামর্শ ও মূল্যায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে আইনবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনের’ আদলে এ কমিশনের নাম হতে পারে ‘গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও আইনবিষয়ক সংসদীয় কমিশন,’ যা সংবিধান, আইন ও প্রশাসনিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে বিকশিত করার কাজ করবে।