দুটি জাতীয় দৈনিক ও ২ সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১, গ্রেপ্তার ৯

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২২ ডিসেম্বর) : জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের (ছায়ানট ও উদীচী) কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আজ সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সন্ত্রাসীরা রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়ে ভাঙচুর–লুটপাট চালায়। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় কার্যালয় দুটি। একই দিন মধ্যরাতে ধানমন্ডিতে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানটে হামলার পরদিন শুক্রবার রাতে ঢাকার তোপখানা সড়কে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে বলে উদীচীর একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে অভিযোগ করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা ও মো. শফিকুল ইসলাম।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার কাশেম ফারুক বগুড়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। মো. সাইদুর রহমান ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।

শেরপুর জেলার বাসিন্দা গ্রেপ্তার রাকিব হোসেন প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এ ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হয়েছেন। তাঁর আইডি থেকে ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে পোস্ট করা হয়। তিনি ফেসবুকে তাঁর আইডি থেকে উসকানিমূলক পোস্টও করেন।

এ ঘটনায় লুট হওয়া ৫০ হাজার টাকাসহ ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাইমকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাইম স্বীকার করেছেন, তিনি মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছেন। লুট করা টাকা দিয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কেনেন, যা ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মো. সোহেল রানাকে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য আইনে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার অন্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এর আগে আজ সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দুটি জাতীয় দৈনিক ও দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।এসব ঘটনায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া বাকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ