পত্রিকা অফিসে হামলা জাতির জন্য লজ্জার: সালাহউদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২২ ডিসেম্বর) : পত্রিকা অফিসে হামলা জাতির জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা শুধুমাত্র দুঃখপ্রকাশ করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এটা সমাপ্ত করতে পারব না। এখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। আমরা জেনেছি, হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট ছিল।’ কিন্তু সেটা আমলে নেওয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালের সম্পাদক, রেডিও ও টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা করে বিএনপি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরেও শুনেছি এক-দুই ঘণ্টা পরে তারা সাড়া দিয়েছে। সেটা কেন? কাদের হাতে আমরা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা দেব? নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যারা দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন যাবত গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে, টার্গেট করে হামলা করতে দেখেছি। এটা নতুন নয়। কিছু স্থাপনায়, ঠিকানায় মবোক্রেসিকে অ্যালাউও করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে। আমি এগুলো সরকারের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছি। এগুলো আরও কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দেশ নিয়ে গণপ্রত্যাশা, গণআকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। দেশের মানুষ পূর্ণ গণতন্ত্র চায়। গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চায়। গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান; সেই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে- যাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।’
গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ বলে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট থাকবে, আছে, কিন্তু দেশের স্বার্থ বিবেচনায় সব সময় আমরা যেন দেশের পক্ষেই থাকি, নিরপেক্ষ থাকি। জনগণ যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, তাহলে আমাদের সহযোগিতা থাকবে সর্বোচ্চ। আমরা অতীত ভুলে যেতে চাই, তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কী করেছে সেটা স্মরণে রাখতে চাই।’
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জনগণ আশা করছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুঁটিটা শক্তিশালী হবে। তিনি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর কষ্টকর নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তন আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শফিক রেহমানের মতো বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের যেভাবে জেলে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে ফ্যাসিবাদের আমলে একটা ঘন কালো অন্ধকারের সময় পার করেছি। প্রত্যেকেই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছি। এখনো যেসব বিষয় আমাদের সামনে আসছে তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। একজন তরুণ নেতার এমন মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাই। তাকে কথার কারণে জীবন দিতে হবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো না।’
তিনি বলেন, ‘কারও বক্তব্য এবং মতামতের জন্য তার ওপর আক্রমণ হওয়া ফ্যাসিবাদোত্তর সময়ে কাম্য নয়। ভারতে গোদি মিডিয়ার কথা বলা হয়, তেমনি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে মিডিয়াও ভূমিকা পালন করে।’
মতবিনিময় সভায় মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অস্থির সময়ে আমরা সবাই অস্থির। মিডিয়া পলিসি যেটা বলা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন হলেই মিডিয়া এগিয়ে যাবে। তারেক রহমান এমন এক সময়ে দেশে আসছেন যখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে নিরাপত্তা। দিল্লিতে আমাদের হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডেইলি স্টার, প্রথম আলোতে হামলা হয়েছে। এরপরে কী হবে আমরা জানি না। আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে চাই, লিখতে চাই। আপনারা আমাদের কথা বলতে দিলে সাধুবাদ জানাব, নয়তো সমালোচনা করব। তবে আগামী দিনে যে চ্যালেঞ্জ আসছে তা মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন, আজকের পত্রিকা সম্পাদক কামরুল হাসান, আমার দেশ নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ইনকিলাব সম্পাদক আ ক ম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল প্রমুখ।
মনোয়ারুল হক/
