নির্বাচন শেষে পদ ছাড়তে চান রাষ্ট্রপতি : রয়টার্সের প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১১ ডিসেম্বর) : বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার রয়টার্স রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকারের সারাংশ প্রকাশ করেছে।
রয়টার্স জানায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন শেষে মেয়াদের মধ্যেই পদ ছাড়তে চান। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণে তিনি নিজেকে “অপমানিত” মনে করছেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও, তার পদ মূলত আনুষ্ঠানিক এবং প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে গেলে এবং সংসদ ভেঙে গেলে সাহাবুদ্দিনই শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তবে আওয়ামী লীগকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রপতির অভিযোগ: ‘ইউনুস আমাকে উপেক্ষা করেছেন’
ধারণা করা হচ্ছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই তার প্রথম গণমাধ্যম সাক্ষাৎকার। তিনি বলেন, “আমি যেতে আগ্রহী। আমি বের হয়ে যেতে চাই।”
তবে তিনি জানান, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি দায়িত্বে থাকবেন।
সাহাবুদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রায় সাত মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ করেননি, তার প্রেস বিভাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এবং সেপ্টেম্বর মাসে সারা বিশ্বের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল, আর এক রাতে এগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। এতে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যায় মনে হয় যেন রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে ফেলা হবে। আমি অত্যন্ত অপমানিত হয়েছি।”
তিনি জানান, প্রতিকৃতি অপসারণ বিষয়ে তিনি ইউনুসকে লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। “আমার কণ্ঠরোধ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
রয়টার্স জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রেস উপদেষ্টারা রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
সেনাপ্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন রযটার্সকে জানান, তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে। সেনাবাহিনী ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল, যা শেষে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রপতির দাবি, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তার দখলের কোনো ইচ্ছা নেই।
বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, তিনি গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনই চান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, যদিও আন্দোলনের শুরুর দিকে কিছু শিক্ষার্থী তার পদত্যাগ দাবি করেছিল, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল তাকে পদ ছাড়তে বলেনি।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে থাকতে পারে। তারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জোটের অংশ ছিল।
হাসিনা পালানোর পর তিনি রাষ্ট্রপতিকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কি না এ প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। সূত্র: রয়টার্স
মনোয়ারুল হক/
