নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১১ নভেম্বর) : ত্রয়োদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।

সোমবার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত এই আচরণবিধিতে নির্বাচনি প্রচারে ড্রোন, পোস্টার ব্যবহার, বিদেশে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞাসহ একগুচ্ছ বিধান নির্ধারণ করেছে ইসি। এছাড়া ২০টির বেশি বিলবোর্ডে মানা, একমঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা, প্রার্থী ও দলের অঙ্গীকারনামা, সোশাল মিডিয়ায় ভোটের প্রচারে কড়াকড়ি আরোপ, অসৎ উদ্দেশ্যে এআই ব্যবহারে মানা, পোস্টার ও ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ কি করা যাবে, কি করা যাবে না তা তুলে ধরা হয়েছে এ বিধিমালায়।

আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং দলের জন্য দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির।

প্রথমবারের মতো পোস্টার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হল ভোটের প্রচারে। এছাড়া একমঞ্চে প্রার্থীদের ইশতেহার ঘোষণা, আচরণবিধি মানায় দল ও প্রার্থীকে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আচরণবিধি আমরা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করে রেখেছিলাম। আরপিও জারি হওয়ায় আজ আচরণবিধি গেজেটে পাঠানোর জন্য দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে এবার নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারি হয় সোমবার। এরপর আরপিওর আলোকে আচরণবিধি গেজেট আকারে জারি করেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার:
কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করিয়া নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করিতে পারিবেন। তবে এক্ষেত্রে…

>প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা দল বা প্রার্থী সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, একাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য সনাক্তকরণ তথ্যাদি উক্তরূপে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পূর্বে রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিল করতে হবে।

> প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা যাবে না;

> ঘৃণাত্নক বক্তব্য, ভুল তথ্য, কাহারো চেহারা বিকৃত করা ও নির্বাচন সংক্রান্ত বানোয়াট তথ্যসহ সকল প্রকার ক্ষতিকর কনটেন্ট বানানো ও প্রচার করা যাইবে না।

> প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।

> নির্বাচনি স্বার্থ হাসিল করিবার জন্য ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার করা যাবে না।

> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কনটেন্ট শেয়ার ও প্রকাশ করার পূর্বে সত্যতা যাচাই করতে হবে।

> রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য কিংবা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো  প্রার্থী বা ব্যক্তির চরিত্র হনন কিংবা সুনাম নষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে, সাধারণভাবে বা সম্পাদন (Edit) করে কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা Artificial Intelligence (AI) দ্বারা কোনো মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, পক্ষপাতমূলক, বিদ্বেষপূর্ণ, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ এবং মানহানিকর আধেয় (content) তৈরি, প্রকাশ, প্রচার ও শেয়ার করতে পারবেন না।

গুজব ও এআই অপব্যবহার বন্ধে নির্বাচনী অপরাধ বিবেচনায় শাস্তির বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এবার নতুন ধারা যুক্ত করা হয়।

আচরণবিধিতে আরও যা রয়েছে-
>কোনো দল বা প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশে জনসভা, পথ সভা, সভা-সমাবেশ বা কোনো প্রচারণা করতে পারবে না।

> ভোটের প্রচারে থাকছে না পোস্টারের ব্যবহার। একজন প্রার্থী তার সংসদীয় আসনে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে না; যার দৈর্ঘ্য হবে সর্বোচ্চ ১৬ ফুট আর প্রস্থ ৯ ফুট।

> নির্বাচনের দিন ও প্রচারের সময় কোনো ধরনের ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

> প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠান ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবে। তবে ভোটার স্লিপে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদের নাম ও প্রতীক উল্লেখ করতে পারবে না।

> বিলবোর্ডে শুধু যেগুলো ডিজিটাল বিলবোর্ড, সেগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

> ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেটে পলিথিনের আবরণ নয়, প্লাস্টিক (পিভিসি) ব্যানার ব্যবহার করা যাবে না।

>সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় অন্তবর্তীকালীন/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না।

>প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে; প্রচার সামগ্রীতে পলিথিন, রেকসিনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

> প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে।

> আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রার্থী ও দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও দিতে হবে।

>আচরণবিধির ‘গুরুতর’ অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এবার যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনি অপরাধে আরপিও ৯১ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল করে থাকে ইসি। এ বিষয়টি আচরণ বিধিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে।

>গণমাধ্যমের সংলাপ ও সব প্রার্থীর এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট আসনে সব প্রার্থীকে নিয়ে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।

প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবার। দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ও আচরণবিধি জারির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কার কাজ শেষ হল। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ