রাবির রেজিস্ট্রারের সঙ্গে জিএস আম্মারের বাগবিতণ্ডার ভিডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী), এবিসিনিউজবিডি, (১০ নভেম্বর) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস সালাউদ্দিন আম্মার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, তর্কের এক পর্যায়ে আম্মারকে বেয়াদব সম্বোধন করে বের হয়ে যেতে বলেন রেজিস্ট্রার। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, সে (আম্মার) ভালোভাবেই জানে সেখানে কারা ছিল। সে এখানে বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছিল-যেটা তার স্বভাব। সে সবসময় মিথ্যা বলে এবং ফুটেজবাজি করে। সে সেখানে উপস্থিত সবাইকে চেনার পরেও, সেখানে গিয়ে ওদেরকে দেখার পরেই বলছে উনারা বিএনপির নেতাকর্মী, বৈঠক করছে। এরপর সে আমাকে উত্তেজিত করতে থাকলে, এক পর্যায়ে আমি তাকে বের হয়ে যেতে বলি।

জানা গেছে, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিভাগে প্রায় ২৩দিন ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। দাবি আদায়ে উপাচার্যের কাছে যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে রাকসু প্রতিনিধি হিসেবে তাদের সঙ্গে অংশ নেন জিএস সালাউদ্দিন আম্মার। এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের গেলে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

আম্মারের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের দাবিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অপসারণে উপাচার্য চিঠি ইস্যু করেছেন এবং ফর্মালিটি শেষ করতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তিনি সেটা বিলম্ব করছেন। আমি কাজের অগ্রগতি জানতে সেখানে যাই। তখন তিনি উচ্চবাচ্য করেছেন।

ভিডিওতে দেখা গেছে, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রেজিস্ট্রারের কক্ষে প্রবেশ করেন সালাউদ্দিন আম্মার। তখন রেজিস্ট্রার আম্মারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে তোমার বিষয়ে, তোমাকে বাইরে বসতে বলা হয়েছে, তুমি কেন এখন এসেছো? আম্মার বলেন, আমাকে সচিব বলেছেন, ভেতরে মহানগর বিএনপির মিটিং চলছে। রেজিস্ট্রার বলেন, না। আমি তোমাকে ১০ মিনিট বসতে বলেছি। তুমি এভাবে ঢুকতে পার না। আম্মার প্রতিত্তরে বলেন, অবশ্যই স্যার! আমি ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি। আপনি স্যার চিঠি আটকে রাখছেন। তখন উত্তেজিত হয়ে রেজিস্ট্রার আম্মারকে বলেন, এই বেয়াদব ছেলে কীসের চিঠি আটকে রেখেছি। তখন আম্মার আবার বলেন, ‘বেয়াদব তো আমি, ডেফিনিটলি বেয়াদব।’

উত্তেজিত হয়ে রেজিস্ট্রার আরও বলেন, আমার সঙ্গে বেয়াদবি কেন? তুমি কে হে? তখন আম্মার আরও তর্ক শুরু করেন। এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার চেয়ার থেকে উঠে আঙুল উঁচিয়ে আম্মারকে ‘গেট আউট’ বলে বের হয়ে যেতে বলেন।

এ ঘটনায় রাকসু ভিপি ও শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর জাহিদ বলেছেন, রাকসু নির্বাচনের আগে থেকেই আমরা খেয়াল করেছি প্রশাসন এবং শিক্ষক মহলের কেউ কেউ যেন অনুরোধে ঢেঁকি গিলছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের এ আচরণ পরিবর্তন হওয়াটা সমীচীন ছিল। কিন্তু এখনো প্রশাসনের কারো কারো আচরণ দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা রাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে। এজন্য তারা যেমন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খ্যাপা, তেমনি তাদের প্রতিনিধিদের ব্যাপারেও।

তিনি বলেন, চাইলেই মনমতো চলতে পারছে না। নানা বিষয়ে অসামঞ্জস্যের থলের বেড়াল বেরিয়ে আসছে। রাকসু ফান্ডের হিসাব দিতে পারছে না। আর চিঠি আটকে রাখার সেকেলে গোঁড়ামি তো আছেই। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনারা অনেক দূর পিছিয়ে দিয়েছেন। রেজিস্ট্রার অফিসে যেকোনো চিঠি আটকে থাকছে। আজকে রাকসু জিএসের সাথে রেজিস্ট্রারের এহেন নিন্দাজনক আচরণ সেই জমা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসন প্রভু নয়, শিক্ষার্থীরা কারো দাস নয়।

বিএনপির নাম টানায় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, রেজিস্ট্রার অফিসে আম্মার ও শিক্ষক একে অপরকে ধমকাচ্ছেন, বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অথচ সেখানে বিএনপির কেউই ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ আজ তিনি তাদের চিনলেন না! গণতান্ত্রিক সমাজে যে কেউ আলোচনা করতেই পারে, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এনসিপির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, আমরা স্যারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেছিলাম। জিএস হয়তো আমাদের বিএনপি মনে করেছেন। এতে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ