খালেদার দুই দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ১৯ জুন

khaleda zia বেগম খালেদা জিয়ারিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন পিছিয়ে আগামী ১৯ জুন পুনর্নির্ধারণ করেছেন আদালত।

বুধবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালত আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন এ দিন ধার্য করেন।

বুধবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন নির্ধারিত ছিল। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলা দু’টির বিচারক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট বিচারাধীন রয়েছে উল্লেখ করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর বিষয়ে সময়ের আবেদন জানান।

শুনানিতে বলেন, হাইকোর্টের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ মে রিটের আদেশ হবে। যেহেতু বিচারক নিয়োগের বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সুতরাং, হাইকোর্টে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা শুনানি পেছানোর আবেদন করছি।

আদালত এ আবেদন গ্রহণ করে ১৯ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন পিছিয়ে আগামী ১৯ জুন পুনর্নির্ধারণ করেন।

শুনানিতে অংশ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

তিনি জানান, যেহেতু মামলা সংক্রান্ত হাইকোর্টে রিট আদেশের পর্যায়ে আছে, তাই বুধবার খালেদা জিয়ার পক্ষে আমরা তার আদালতে উপস্থিত হতে সময়ের আবেদন করি। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন পিছিয়েছেন।

সাক্ষ্য দিতে মামলা দুটির বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশাল পিপি মোশারফ হোসেন কাজল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার আরিফুর রহমান জানান, সরকার মামলা দুটি মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে গেজেট প্রকাশের পর বুধবারই ছিল প্রথম তারিখ। সকাল সোয়া ১০টার দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয়। ১০টা ৩৫ মিনিটে আদেশ দেন বিচারক।

এর আগে বিচারিক আদালতে মামলা দুটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর তারা বিচারক নিয়োগের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আগামী ২৫ মে রোববার এ আবেদনের আদেশ দানের দিন ধার্য রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। চার্জ গঠন করা হয়, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলা দুটির অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দুটির চার্জ শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু, জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।

২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।

মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় ১৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

গত ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ