দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে নোবেলজয়ী মাচাদো
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, (১১ ডিসেম্বর) : প্রায় এক বছর পর বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে থাকা হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তিনি সমর্থকদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।
এর আগের দিন তার পক্ষ থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেন তার মেয়ে, কারণ মাচাদো সেদিন দেশে থেকে আত্মগোপনে ছিলেন এবং কয়েক ঘণ্টা পরে নরওয়েতে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতার দমন–নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের পুরস্কারস্বরূপ এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন মাচাদো। তবে তিনি সময়মতো নরওয়েতে পৌঁছাতে না পারায় পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার মেয়ে অনুষ্ঠানে আবেগঘন বক্তৃতা দেন।
নরওয়েতে পৌঁছে পরিবারকে দেখে তিনি হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাসিমুখে হাত নাড়েন। সমর্থকরা ‘লিবারতাদ’ (স্বাধীনতা) স্লোগান দিতে থাকেন। নরওয়ে সরকার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে (জিএমটি) তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।
মাচাদো সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা দিয়েছিলেন গত ৯ জানুয়ারি, মাদুরোর তৃতীয় দফা শপথগ্রহণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি হুমকি ছিল, দেশ ছাড়লে তাকে ‘ফরার’ ঘোষণা করবে বলেও কারাকাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল।
ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকা–বিশেষজ্ঞ বেনেডিক্ট বুল বলেন, দেশে ফিরে গেলে তাকে আটক করার ঝুঁকি আছে। তবে মাচাদোকে আটকের প্রতীকী মূল্য এত বেশি যে সরকার সাধারণত তার ব্যাপারে কিছুটা সতর্ক থাকে। তিনি দীর্ঘদিন দেশ ছাড়া থাকলে বিরোধী রাজনীতিতে তার প্রভাব কমে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নোবেল পুরস্কার গ্রহণ বক্তৃতায়—যা তার হয়ে পড়েন তার মেয়ে—মাচাদো ভেনেজুয়েলার জনগণকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” তার পরিবার এবং কয়েকটি লাতিন আমেরিকান দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মাচাদো মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন এবং এগুলোকে “মানবতাবিরোধী অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করেন।
২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ হওয়া এবং নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করার পর মাচাদো আন্তর্জাতিক সমর্থন পান। বিরোধী দল দাবি করে তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গনসালেজ উরৃতিয়া নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন—তিনি বর্তমানে নির্বাসনে আছেন এবং নোবেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ইতিহাসে আরও কয়েকজন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি। সেই ধারাবাহিকতায় মাচাদোর পক্ষ থেকে তার মেয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন। সূত্র: ফ্রান্স ২৪
মনোয়ারুল হক/
