ফাইনালে ভারতই ফেবারিট

ক্রীড়া প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (২৮ সেপ্টেম্বর) : গ্রুপপর্বে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে কলকাতার এক দৈনিকের প্রতিবেদনে লেখা হলো, দুই দেশের যত বৈরিতাই থাকুক, আগে ভারত-পাকিস্তানের সাংবাদিকদের মধ্যে যে হৃদ্যতা দেখা যেত, সেটা এবার আরব আমিরাতে দেখা যাচ্ছে না। একই প্রেসবক্সে পাশাপাশি বসতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের মধ্যে একটা অদৃশ্য বিভেদরেখা কাজ করছেই। সব জায়গা কেমন যেন এক ঘৃণার আবহে চলছে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ।

প্রতিবেদক দুবাইয়ে বসে নয়, লিখেছেন কলকাতা থেকে। সুপার ফোরে দুবাইয়ের প্রেসবক্সে কাভার করতে গিয়ে মনে হলো, যতটা বলা হচ্ছে, ততটা না। তবে যতই পেশাদার সংবাদমাধ্যম কর্মী হন, দিন শেষে দেশের স্বার্থ আগে। একটা মজার ঘটনা, ভারত ও পাকিস্তানের দুজন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক পাশাপাশি বসে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অলিখিত সেমিফাইনাল কাভার করছেন। ঠিক তাঁদের মাঝে হঠাৎ আড্ডা দিতে এলেন ওয়াসিম আকরাম। দুই সিনিয়র সাংবাদিক এবং ওয়াসিমের আলোচনার বিষয়বস্তু বাংলাদেশের জঘন্য ব্যাটিং!

বাংলাদেশ পারেনি টুর্নামেন্ট থেকে পাকিস্তানকে বিদায় করতে। উল্টো বাংলাদেশকে বিদায় করে ৪১ বছরের এশিয়া কাপে যা দেখা যায়নি, সেটাই সত্যি করল পাকিস্তান। এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল। পাকিস্তানি দর্শকেরাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারছেন না, আজ শাহিনরা দুবাইয়ে দেখিয়ে দেবেন ভারতকে!

কীভাবে বলবেন? ভারতের যে বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ, দুবাইয়ের কন্ডিশন অনুযায়ী দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণ—যেভাবে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে উঠেছে (পাকিস্তানকেই দুবার উড়িয়ে দিয়েছে), আজকের ফাইনালে স্পষ্টত ফেবারিট ভারত। পাকিস্তানের শক্তির জায়গা একটাই—বোলিং আক্রমণ। বোলারদের নৈপুণ্যে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান।

তবে ফাইনালে পাকিস্তানকে অনুপ্রাণিত করতে পারে অতীত রেকর্ড। বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে পাঁচবার মুখোমুখি হয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে পাকিস্তান। ১৯৮৫ সালে মেলবোর্নে রবি শাস্ত্রীর সেই ‘আইকনিক ওডি’ গাড়ি জয়ী পারফরম্যান্সে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল ভারত। পরের বছর শারজায় শেষ বলে ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে অস্ট্রেলিশিয়া কাপ জিতিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১৯৯৪ অস্ট্রেলিশিয়া কাপের ফাইনাল পাকিস্তান জিতেছিল ওয়াসিম, সাঈদ আনোয়ার আর আমির সোহেলের নৈপুণ্যে।

জোহানেসবার্গে সুপার ওভারে যাওয়া স্নায়ুক্ষয়ী ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতকে স্তব্ধ করতে পারেনি মিসবাহ-উল-হকের লড়াকু ইনিংস। তবে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তান কোনোভাবেই ফেবারিট ছিল না। কোহলি-রোহিতের ভারতকে হতাশায় ডুবিয়ে পাকিস্তানকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ফখর-আমিররা।

আজ কী হবে? ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালের মতো ‘চ্যাম্পিয়নস লাক’ পাকিস্তানের দিকে থাকবে, নাকি ফেবারিট ভারতের হাতেই শিরোপা? রাজনৈতিক ও সামরিক বৈরিতায় এখন মাঠের বাইরে দুই দলের মধ্যে যে উত্তেজনা, উত্তাপ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা—মাঠে ততটা দেখা যায় না। ভারতের এতটাই একপেশে সাফল্য, সূর্যকুমার যাদব তাই পাকিস্তানকে খোঁচা মেরে বলেন, ‘কিসের দ্বৈরথ বলেন আপনারা? দ্বৈরথ হয় সমশক্তির দলের মধ্যে।’ওয়ানডে বিশ্বকাপে স্কোর লাইন ৮-০, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৭-১, টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারত তো আরও বেশি করে পাকিস্তানের ক্ষত জায়গায় খোঁচা দেবে।

অথচ আশি-নব্বই দশকে ছবিটা ছিল উল্টো, ভারতের বিপক্ষে যাঁদের হাত ধরে পরিসংখ্যান-রেকর্ডে এগিয়ে থাকত পাকিস্তান, সেই ওয়াসিম-ওয়াকাররা এখন মাইক্রোফোন হাতে দেখেন উত্তরসূরিদের আত্মসমর্পণ। পাশে সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রীদের মুখে তখন অনুজদের সাফল্যে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বসিত হাসি। ওয়াসিম মেনে নিচ্ছেন, আজকের ফাইনালে ভারতই ফেবারিট। তবে পাকিস্তানি কিংবদন্তি ক্রিকেটের আপ্তকথাই বললেন, ‘রোববারের ফাইনালে অবশ্যই ভারত ফেবারিট। তবে আপনারা দেখে থাকেন, একটা ছোট্ট মুহূর্ত এই ফরম্যাটের রং বদলে দিতে পারে। পাকিস্তান যে ছন্দ ফিরে পেয়েছে, সেটিই রোববারের ফাইনালে তাদের বড় সম্বল।’

যেহেতু দুই দলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এখনো নিয়মিত খেলা হয় না, বড় টুর্নামেন্টের আয়োজক-ব্রডকাস্টাররা যেন চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে বহুজাতীয় টুর্নামেন্টের দিকে। দুই দলকে খেলানো মানেই ক্রিকেটীয় মুনাফার নিশ্চয়তা। এ কারণে আইসিসির প্রতিটি ইভেন্টে গ্রুপপর্বে অন্তত ভারত-পাকিস্তান থাকবে। এসিসির ইভেন্টের ফরম্যাট অন্তত দুবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার নিশ্চয়তা দেয়। এবার নেহাতই ম্যাচ নয়, রীতিমতো ফাইনালে দুই দল—মরুতে সান ডে ব্লকবাস্টার! যদিও এই এশিয়া কাপে দুই দলের মধ্যে এত অক্রিকেটীয় ঘটনা দেখা যাচ্ছে, আজ ফাইনালে কোন অভাবিত দৃশ্য দেখা যায়, কে জানে।

ভারত-পাকিস্তানের এই উত্তাপ সামলানোর দায়িত্বে থাকছে বাংলাদেশও। ফিল্ড আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। আর চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে থাকছেন আরেক বাংলাদেশি আম্পায়ার গাজী সোহেল। তাহলে তৈরি হয়ে থাকুন, ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ