নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর অভিযোগে মুখ খুললেন ঢাবি ভিসি
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (২৮ সেপ্টেম্বর) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপানোর অভিযোগের বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে না। কারণ ব্যালট পেপার ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।
লিখিত বক্তব্যে ঢাবি ভিসি আরও বলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ও প্রার্থীর বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ ব্যালট ছাপানোর স্বার্থে আমাদের মূল ভেন্ডরের সাথে আলোচনা করে সমযোগ্য একটি সহযোগী/এসোসিয়েট প্রতিষ্ঠানকে একই টেন্ডারের অধীনে কাজে সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়।
নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর তথ্যটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উক্ত সহযোগী ভেন্ডর অবহিত করেনি জানিয়ে ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ভেন্ডরের তথ্য অনুযায়ী, সহযোগী প্রতিষ্ঠান নীলক্ষেতে ২২ রিম কাগজ দিয়ে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপায়। যা থেকে প্রিন্টিং, কাটিং, প্রি-স্ক্যান পর্ব শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যালট প্যাকেটে সিলগালা করে ৮৬ হাজার ২৪৩টি ব্যালট সরবরাহযোগ্য করা হয় এবং অতিরিক্ত ব্যালটগুলো প্রচলিত পদ্ধতিতে নষ্ট করে ফেলা হয়।
ভেন্ডর আরও জানায়, নীলক্ষেতে কাটিং শেষে প্রি-স্ক্যান ও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য তারা তাদের মূল অফিসে এনে প্রি-স্ক্যান সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্যাকেটে ভরে সিলগালা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করে। তারা ব্যালট প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ায় ও আনা-নেওয়ায় চুক্তি মোতাবেক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ব্যস্ততার কারণে কর্তৃপক্ষকে নীলক্ষেতে ব্যালট প্রিন্টিং ও কাটিংয়ের বিষয়টি জানাতে ভুলে যায় বলে স্বীকার করে।
উপাচার্য বলেন, এটা পরিস্কারভাবে অনুধাবনযোগ্য যে, ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে না। কারণ, ব্যালট পেপার ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। ব্যালট পেপারটি ছাপানোর পর তা নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করতে হয়। তারপর সুরক্ষা কোড আরোপ করে ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যান করে তা মেশিনে পাঠযোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করতে হয়। এরপর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সীলসহ স্বাক্ষর ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত হলেই তা ভোট গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হয়। এ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই পূর্ণ সর্তকতার সঙ্গে (DUE DILIGENCE) ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যালট পেপারের হিসেব জানিয়ে অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী, উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। ভোট দিয়েছেন ২৯ হাজার ৮২১ জন ভোটার। মোট ব্যালট ব্যবহার করা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬টি। অবশিষ্ট ব্যালট ৬০ হাজার ৩১৮।
সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা দেখানোর দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, প্রার্থীরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা দায়িত্বপ্রাপ্তদের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট ফুটেজ বা স্বাক্ষর দেখা যাবে।
সবশেষে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ব্যালট ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা কোনোভাবে প্রভাবিত করেনি এবং পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে।