দুই পাশে সেতু, চলার পথে পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১০ নভেম্বর) : রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় সেগুলো জনগণের কোনো কাজে আসছে না। এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করতে গিয়ে নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হারও কমে গেছে। ঘটেছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর মতো ঘটনাও।
স্থানীয়রা বলছেন, জনগুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংযোগ সড়কগুলো নির্মাণ করে ওই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে সুব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার কুদ্দুস পাড়া জাহাঙ্গীরের বাড়ির পাশে ছড়ার ওপর নির্মিত দুটি সেতু এখন স্থানীয়দের আক্ষেপ আর দুর্ভোগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের এসব সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও মাত্র ৮০০ ফুট সংযোগ সড়কের অভাবে গেল সাত বছর ধরে এগুলো পরিত্যক্ত হয়ে আছে। এতে ঘুরপথে যাতায়াত, জরুরি রোগী পরিবহন ও মৌসুমি ফল-ফসল বাজারজাত করতে গিয়ে স্থানীয় হাজারও মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কথা হয় সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ব্রিজ বহুদিন ধরে পড়ে আছে। এর দুই দিকেই পানি। বহু মানুষ এদিক দিয়ে চলাচল করে। সড়কে পানি থাকলে বাচ্চারা অনেক ঝুঁকিতে থাকে। মাঝেমধ্যে পানিতে পড়ে যায়। কিছুদিন আগে এভাবে একটি বাচ্চা মারাও গেছে। কিন্তু সড়ক কেন হচ্ছে না, তা আমরা জানি না। আমরা চাই দ্রুত রাস্তা বানানো হোক, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের উপকার হবে।’
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘কয়েক বছর হয় এখানে দুটি সেতু হয়েছে। কিন্তু চলাফেরার মতো কোনো সড়ক নেই। রিকশা নিয়েও কেউ এই পথে যেতে পারে না। অসুস্থ কোনো রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার উপায় নেই। বছরের বেশির ভাগ সময় পথটি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সরকার সড়কটি বানিয়ে দিলে ব্রিজগুলো কাজে লাগবে। এলাকার মানুষের চলাফেরা করা সহজ হবে। মানুষের ভোগান্তি কমবে।’
চার হাজারের বেশি মানুষকে যাতায়াত করতে গিয়ে এই পথে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই রাস্তাটি এখন এলাকাবাসীর ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে।
রমজান আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মেইন রোড থেকে মুসলিম ব্লকে যাতায়াতের পুরোনো সড়ক এটি। দুই ব্রিজের মধ্যে থাকা রাস্তা যদি উঁচু করা যায়, তাহলে যাতায়াতে সুবিধা হতো। যারা নিয়মিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করেন তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেন।’
জোবায়ের মাহমুদ নামে আরেকজন বলেন, ‘এই দুই সেতুর দুই পাশে পাকা রাস্তা আছে। মাঝখানে যদি ৮০০ ফুটের মতো রাস্তা হয়ে যায়, তাহলে অন্তত চার হাজার মানুষের চলাচলের সুবিধা হয়।’
স্থানীয় কাচালং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে একই সময়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি বানাতে খরচ হয় ৩৪ লাখ টাকা। কিন্তু সেতুর উত্তর প্রান্তে মাত্র ৫০ ফুট জায়গায় সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি কোনো কাজে আসে না। দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এই সেতুর কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছেন, ‘এখানে ৫০-৬০ ফুটের মতো সড়ক বাকি আছে। এ কারণে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। বর্ষাকালে খুব নাজুক অবস্থা থাকে। অন্য সময় ভাঙা থাকার কারণে এ পথে হাঁটা যায় না। এখন সবখানে রাস্তাঘাট প্রশস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখানে রাস্তা না থাকায় এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষকেও নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি করা দরকার।’
তবে দীর্ঘ ভোগান্তির পর তিনটি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সেতু তিনটির সংযোগ সড়ক দ্রুত করে দিতে আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিশেষ করে এলজিইডি কিংবা পিআইওর দপ্তরকে নির্দেশনা দেব। কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করব।’
