লোহাগাড়ায় দুর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ
চট্টগ্রাম ব্যুরো, এবিসিনিউজবিডি, (৭ ডিসেম্বর) : দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণে আলোচনায় থাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া অংশ অবশেষে চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে যান চলাচল আরও নিরাপদ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তখন এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে স্থানীরা মনে করছেন, শুধু সড়ক প্রশস্ত করলেই দুর্ঘটনা কমবে না। সড়কের শৃঙ্খলা সবার দায়িত্বশীল আচরণের ওপর নির্ভর করে। সড়ক চওড়া করার পাশাপাশি মহাসড়কের পাশের অবৈধ পার্কিং, অস্থায়ী দোকান ও ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয়রা মত দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শুধু এই জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গত বছরের ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই স্থানে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৬ জন নিহত হন। আহত হন আরও ২০ জন। এ ছাড়া ২০২০ সালে একই স্থানে ট্রাক-লেগুনা সংঘর্ষে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত জাঙ্গালিয়া অংশের ৯০০ মিটার পথ চার লেনে উন্নীত করা হবে। একই সঙ্গে মহাসড়কের মাঝখানে দেওয়া হবে ডিভাইডার। এ ছাড়া একই মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকা পর্যন্ত ২০ ফুটের রাস্তা ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। আগামী এক মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়ক প্রশস্ত করা নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এটি একমাত্র সমাধান নয়। চালকদের সচেতনতা, গতিসীমা মেনে চলা, নিয়মিত ট্রাফিক তদারকি এবং মহাসড়কের দুই পাশে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ বন্ধ করাসহ বেশকিছু কাঠামোগত পদক্ষেপ একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে দুর্ঘটনা পুরোপুরি কমানো সম্ভব হবে না। এ ছাড়া চালকরা নিয়ম না মানলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।’
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ জাঙ্গালিয়া এলাকাটি চার লেনে উন্নীত হলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। প্রত্যাশা করা যায় দুর্ঘটনাও কমবে। এতে মহাসড়কের মানোন্নয়নের পাশাপাশি চলাচলও হবে তুলনামূলক নিরাপদ। ফলে এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে প্রশস্তকরণের পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, অস্থায়ী দোকান ও ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাবে।’
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের জাঙ্গালিয়া অংশ চার লেনে উন্নীত করা হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারমুখী যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন গতি আসবে। তবে এখন দেখার বিষয়, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নিয়মনীতির প্রয়োগ কতটা কঠোর হবে। কারণ নিরাপদ মহাসড়ক শুধু প্রশস্ততার ওপর নয়, বরং সবার দায়িত্বশীল আচরণের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রাম্বল স্ট্রিপ বসানো হয়েছিল। এবার ৯০০ মিটার চার লেনে উন্নীত করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের আরও কিছু অংশ প্রশস্ত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহাসড়কের দুই পাশের যানবাহনের প্রবাহ আলাদা হবে, ওভারটেকিংয়ের চাপ কমবে এবং চালকদের জন্য নিরাপদ গতিতে চলার সুযোগ তৈরি হবে।’
জানা গেছে, রাম্বল স্ট্রিপ হলো রাস্তায় স্থাপন করা একটি পদ্ধতি, যা গাড়ির টায়ার রাস্তার লেন ছাড়িয়ে গেলে কম্পন ও শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে চালককে সতর্ক করে। বিশেষ করে অমনোযোগী বা ঘুমন্ত চালকদের লেন পরিবর্তন বা রাস্তা থেকে বেরিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
মনোয়ারুল হক/
