আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৩ নভেম্বর) : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার  রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বরে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

ট্রাইব্যুনালের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়, আর প্রবেশের সময় তল্লাশির পরই জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, রায়ের তারিখ ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়।

গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের দিন আজ (১৩ নভেম্বর) ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে এটি হতে যাচ্ছে প্রথম রায়।

আজ সকাল ১০টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চে মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গত ২৩ অক্টোবর মামলাটির চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এবং বিশ্বে অনুরূপ মামলার নজির তুলে ধরেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের জবাবে বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং প্রতিরক্ষা আইনজীবী আমির হোসেন।

শেখ হাসিনা এবং কামাল ছাড়াও এ মামলায় আসামি হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামলার শুরু থেকেই শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক। তবে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কারাবন্দি হন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

অভিযোগ গঠনের দিন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হওয়ার আবেদন করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সত্য ঘটনা প্রকাশ করার শর্তে মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করেন ট্র্যাইব্যুনাল। সেই থেকে রাজসাক্ষীর মর্যাদায় তিনি কারাগারেই আছেন। প্রতি ধার্যদিনে তাকে কারাগার থেকে এনে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আজও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে— উসকানি, অস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা প্রায় আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যেখানে তথ্যসূত্র, জব্দতালিকা, দালিলিক প্রমাণ ও শহীদদের তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোট ৮৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার রায়ের তারিখ ঘিরে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ