ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনের গুজব ছড়িয়ে হত্যা, চেয়ারম্যান মেম্বারকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা

জেলা প্রতিবেদক (ফরিদপুর), এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৭ এপ্রিল ২০২৪) : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার ‘গুজব’ রটিয়ে গণপিটুনিতে দুই ভাইকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। তাদের ধরিয়ে দিতে বা এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মধুখালীর ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একজন অপরাধী। ইতিমধ্যে তিনি দু’বার বরখাস্ত হয়েছেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বার এখন পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছেন। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রথমে মাগুরায় শনাক্ত করে। সেখানে ধরতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে যশোরে তাদের শনাক্ত করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

জেলা প্রশাসক বলেন, এরই মধ্যে বিমানবন্দর এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ইয়াসিন কবীর, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনিম প্রমুখ।

১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। তারা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)। ওই দিন সন্ধ্যায় তাদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে তাদের মেঝেতে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করা হয়। এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে যান। প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ