তফসিলের আগে ইসির আরেক দফা আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (৪ ডিসেম্বর) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার আগে আবারও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও আচরণবিধিতে নতুন করে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পোস্টাল ভোট চালুর পর গণভোটসংক্রান্ত অধ্যাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরপিওতে সংশোধন করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। সংশোধনী প্রস্তাব গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে রয়েছে ভাষাগত ভুল, পোস্টাল ব্যালটের গণনাপদ্ধতি এবং নির্বাচনি প্রচারের বিধি-বিধানের সংশোধিত ও পরিবর্তিত প্রস্তাব।

ইতোমধ্যে ভোটের প্রস্তুতির শেষ ধাপে রয়েছে ইসি। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা এবং আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ ৩ নভেম্বর আরপিও সংশোধন এবং ১০ নভেম্বর আচরণবিধির গেজেট হলেও সেখানে প্রায় এক ডজন গুরুতর ভুল রয়ে গেছে। সেগুলোর সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেলেই অধ্যাদেশ আকারে সংশোধনী জারি করা হবে।

গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘গণভোটের কারণে আরপিওতে আবার সংশোধনী আনতে হচ্ছে। লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে।’ আচরণবিধিতেও অসংখ্য বিভ্রান্তিকর ভুল, যেমন ‘করিতে পারবেন না’-এর স্থলে ‘করা যাইবে না’ বা ‘পারিবেন’-এর স্থলে ভুলভাবে ‘পারিবন’- এসবের সংশোধনী থাকবে।

আরপিওর ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে পোস্টাল ব্যালটসংক্রান্ত বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো ব্যালটে প্রতীকের বিপরীতে সঠিকভাবে টিক বা ক্রস না থাকলে তা বাতিল হবে। আদালতের রায়ে প্রার্থীতালিকায় পরিবর্তন ঘটলে সেই আসনে জমাকৃত পোস্টাল ব্যালট গণনার জন্য বিবেচনা করা হবে না। ভোটার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করলেও ভোট বাতিল হবে। আরপিওর ৩৭ ও ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে এখনো রয়েছে সমান ভোটে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণের বিধান, যা ইসি বাতিল করতে চায়। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এরকম পরিস্থিতিতে লটারি নয়, পুনরায় ভোট হবে।

আচরণবিধির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে নির্বাচনি প্রচারের নিয়মে। পোস্টার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো বিকল্প প্রচারের দাবি জানিয়েছিল। এ জন্য ১৪(খ) বিধি সংশোধন করে প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা বা মেট্রোপলিটনের প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে এবং পুরো নির্বাচনি এলাকায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা না করা হলে গ্রামীণ এলাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক বিলবোর্ড স্থাপনের সুযোগ তৈরি থেকে যাবে, যা নির্বাচনি খরচ বাড়ানোর পাশাপাশি ভিজ্যুয়াল পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তা ছাড়া প্রচারে মাইক ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে জনসভায় তিনটির বদলে আরও বেশি মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘এত ভুল থাকা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অদক্ষতার পরিচয় বলে মনে করছি আমরা। ইতোমধ্যে ইসি দুই হাজার কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আবার নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন হবে।’

এদিকে প্রস্তাবিত সব সংশোধনী চূড়ান্ত করে আগামী ৭ ডিসেম্বরের কমিশন সভায় তফসিল নিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ