বিএনপির নির্বাচনি প্রচার স্থবির, মনোযোগ খালেদা জিয়ার সুস্থতায়
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (৪ ডিসেম্বর) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। দলের চেয়ারপারসন ও প্রবীণ রাজনীতিক খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রভাব পড়েছে বিএনপির পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও। বিএনপির সামগ্রিক কার্যক্রমও থমকে আছে। দলীয় প্রধানের অসুস্থতার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে মনোযোগও দিতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা। ইতোমধ্যে বিজয় দিবস উদযাপনসহ দলীয় অনেক কর্মসূচি স্থগিত করেছে দলটি। চেয়ারপারসনের রোগমুক্তির জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে দোয়া মাহফিল কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অসুস্থতা ভিন্নমাত্রার এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির নজির তৈরি করেছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়েছে। হাসপাতালে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা এসে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-ভিভিআইপি’ সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ও প্রটোকলের ব্যবস্থা করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। পরে একটি আসনে প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে। বগুড়া-৭, ফেনী-১ ও দিনাজপুর-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন ঘোষণায় দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। খালেদা জিয়াকে সামনে রেখেই আসন্ন নির্বাচনটি করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছিল বিএনপি। কিন্তু হুট করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই দলের ভেতরে-বাইরে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। সারা দেশের নির্বাচনি প্রচারসহ নানা কার্যক্রম অনেকটাই থমকে গেছে। খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দলের পক্ষ থেকে দেশের মানুষের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশা করছেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরবেন এবং সামনে থেকেই দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। তারা বলেন, শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর লড়াই করেছেন খালেদা জিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আজকের অসুস্থতা স্বাভাবিক অসুস্থতা নয়। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে তিনি আজকের এই অবস্থায় অসুস্থ হয়েছেন। জাতির প্রতি অনুরোধ করব, প্রতিটি বাড়িতে প্রতিটি মানুষ যেন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করেন। তার ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা আমি দেখেছি। জেলে থাকাকালে তিনি স্লো পয়জনের শিকার হয়েছেন।’
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি মাসের শুরু থেকেই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় বিশদ আকারে প্রচারে নামার পরিকল্পনা ছিল। জনগণের সামনে খাতভিত্তিক লিফলেটে নানা অঙ্গীকার তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের। কিন্তু খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে সেই কর্মসূচি কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষিসহ নানা খাতের ওপর লিফলেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামবে তা এখনো বলতে পারছেন না কেউই।
এদিকে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়া কবে সুস্থ হবেন, তিনি কী আবার রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে সর্বত্র। যদিও দলের পক্ষ থেকে বারবার কোনো গুজবে কান না দিতে নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
প্রতিদিনই হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। পাশাপাশি হাসপাতালের সামনে দলের নেতা-কর্মীসহ ভিড় করছেন খালেদা জিয়ার সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ খবর শুনতে আসেন হাসপাতালের সামনে। তারা তাদের প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার সুযোগ না থাকলেও স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি দলের নেত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া আয়োজন করছে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনৈতিক জীবনে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে কারা নির্যাতনসহ নানা অবিচারের শিকার হয়েছেন, তবুও কখনো আপস করেননি।’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘বিজয় মশাল রোড শো’ কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ স্থগিত করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজয়ের মাসে বিজয়ের মশাল রোড শো কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। কিন্তু এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার অসুস্থ থাকায় এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’
মনোয়ারুল হক/
