৮.৯ মাত্রার ভূকম্পন শক্তি জমছে, অপেক্ষা বের হওয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৩ নভেম্বর) : দুই প্লেটের সংযোগস্থলে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে ৮০০ বছর ধরে। যেখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূকম্পন তৈরির শক্তি জমে আছে। এটা বের হবেই। গত শুক্রবারের ভূমিকম্পের কারণে এখন জমা থাকা সেই শক্তি সহজেই বের হয়ে আসতে পারে। এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল নরসিংদী জেলার মাধবদী।
ভয়াবহ এমন তথ্য জানিয়ে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এ কারণে অবহেলা না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের।
এদিকে গত শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর নরসিংদীর পলাশ উপজেলাতে গতকাল শনিবার সকালে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির। পরপর কম্পন অনুভূত হওয়ায় রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে উঁকি দিচ্ছে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা।
ভূমিকম্প গবেষকদের মতে, ডাউকি ফল্টসহ আশপাশের সক্রিয় প্লেট-সংযোগস্থলে দীর্ঘদিন ধরে জমেছে বিপুল পরিমাণ শক্তি। এ শক্তি যেকোনো সময় ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভয়াবহ কম্পনে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এটা বের হবেই। মাধবদীর সাম্প্রতিক কম্পন সেই শক্তি বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাকে আরও সহজ করে দিয়েছে। আর সেটা হলে ঢাকা নগর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সময় থাকতেই কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে, এখন আর অবহেলার সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় ভূমিকম্প নতুন নয়। অতীতে একাধিক ভয়াবহ কম্পন দেশের ভূ-প্রকৃতি পর্যন্ত বদলে দিয়েছে।
১৭৯৭ সালের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে মেঘনা নদী যে পথে বয়ে যায়, একসময় তা লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। শক্তিশালী কম্পনে মেঘনা নদী পশ্চিম দিকে ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার সরে গেছে।
১৭৬২ সালের ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে টেকনাফ থেকে মায়ানমার উপকূল পর্যন্ত জমি তিন মিটার উঁচু হয়ে ওঠে এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপও উঁচুতে উঠে আসে।
১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্ট অঞ্চলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ঘটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
এরপর ১৮৬৮, ১৯২২ সালে সিলেট, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে একাধিক বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উৎসস্থল যেখানেই হোক, বড় কোনো ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে রাজধানীতে। কারণ নিয়ন্ত্রণহীন নগরায়ণ, দুর্বল ভবন নির্মাণ এবং জনসংখ্যার অতিরিক্ত ঘনত্ব রাজধানীকে ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দুতে ঠেলে দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
পরপর সাম্প্রতিক কম্পনগুলোকে বড় বিপদের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। তাদের মতে, এখনই ঢাকায় দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, পুরোনো ভবনের ঝুঁকি নিরূপণ এবং জরুরি সাড়া-ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা সতর্কবার্তা দিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সময় থাকতেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নইলে বড় কোনো ভূমিকম্পে অপ্রস্তুত ঢাকা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে নিমজ্জিত হতে পারে। সূত্র: বিবিসি
মনোয়ারুল হক/
