জোটের প্রার্থীকেও ভোটে লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৩ অক্টোবর) : আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়া ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “যদি নির্বাচনী জোট হয়, তাহলে জোটের অংশীদার দলের প্রার্থীকেও নিজ দলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এতে ভোটাররা স্পষ্ট ধারণা পাবেন, প্রার্থী কোন দলের প্রতিনিধি।”

তিনি জানান, ‘‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত সব বিধান বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না- এমন বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।’’

সংশোধিত আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনের সময় প্রয়োজনে তিন বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের মতোই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, আলাদা কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন হবে না।

আসিফ নজরুল বলেন, “প্রার্থীদের এখন থেকে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে আয়, সম্পদ ও সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, এসব তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে, যাতে জনগণ সহজেই প্রার্থীদের আর্থিক স্বচ্ছতা যাচাই করতে পারেন।”

তিনি আরও জানান, প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলার নির্বাচন অফিস পরিচালনা ও তদারকির দায়িত্ব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত থাকবে।

সংশোধিত আরপিওতে ‘না’ ভোটের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। কোনো সংসদীয় আসনে যদি একজন প্রার্থী থাকেন, ভোটাররা চাইলে ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। সেই আসনে ‘না’ ভোটের সংখ্যা প্রার্থীর ভোটের চেয়ে বেশি হলে সেখানে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে।  

এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা আর ঘটবে না। এই বিধান গণতন্ত্রকে আরও অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।”

এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের মাত্রা গুরুতর হলে নির্বাচন কমিশন পুরো আসনের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা পাবে। আগে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করার বিধান ছিল।

সংশোধিত অধ্যাদেশে আরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
১. পোস্টাল ব্যালট ভোটের ব্যবস্থা, যাতে প্রবাসী বাংলাদেশি, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোট দিতে পারেন।

২. রাজনৈতিক অনুদানের স্বচ্ছতা বিধান, যেখানে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান ব্যাংকিং চ্যানেলে দিতে হবে এবং অনুদানদাতাকে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং

৩. গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, যাতে সাংবাদিকরা ভোট গণনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশোধিত আরপিওর লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং জবাবদিহিমূলক করা। আমরা এমন একটি প্রক্রিয়া চাই, যেখানে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য একটি মানদণ্ড তৈরি হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ