রক্তঝরা এক বেদনার দৌড়

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে ছিলেন মো. ইব্রাহিম। তাঁর ক্ষতবিক্ষত শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। তবু থামেননি। দৌড়াতে দৌড়াতেই হাসপাতালে পৌঁছান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে চিরদিনের মতো থেমে যায় তাঁর এই জীবনের দৌড়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর টিকাটুলির সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আসেন মো. ইব্রাহিম। ৩৫ বছর বয়সী যুবকের শরীরে ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাত। শরীর থেকে অবিরাম রক্ত ঝরছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করা হলেও চালক ইব্রাহিমকে নিতে চাননি। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ওয়ারী থানা-পুলিশের গাড়িতে করে ভোর চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় তাঁকে। এর একটু পরই মারা যান ইব্রাহিম।
এ সময় তাঁর পকেটে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেট পাওয়া যায়।

ইব্রাহিমের স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় শেখপাড়ায় থাকতেন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ইব্রাহিম। মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ব্যবসার কাজে প্রায়ই ঢাকায় আসতেন ইব্রাহিম। ঘটনার আগে নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পকেটে নারায়ণগঞ্জের বাসের টিকিট পাওয়া গেছে। সেখান থেকেই ঢাকায় ফেরেন তিনি। এরপরই এ ঘটনা ঘটেছে।

ইব্রাহিমের ভাগনে বাদল বলেন, সায়েদাবাদ এলাকার স্বামীবাগ রেললাইনের আশপাশের কোনো এলাকায় হয়তো ইব্রাহিমকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়েছে। এ অবস্থায় এক কিলোমিটারের বেশি পথ রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে সালাউদ্দিন হাসপাতালে আসেন তিনি। তাঁর বুকের ডান পাশে দুটি, বাঁ পাশের বুকের কিছু ওপরে একটি, ডান পায়ে দুটি এবং বাঁ হাতে একটি করে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

বাঁচার জন্য সব চেষ্টাই করেছিলেন ইব্রাহিম—এ কথা জানান বাদল। পুলিশের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে পুলিশের কাছে নিজের নামটি বলতে পারেন ইব্রাহিম। এরপর তাঁর পরিবারের লোকজন ঘটনা জানতে পারেন।

ইব্রাহিমকে কোপানোর ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট ধারণা পায়নি পুলিশ। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সোহেল রানা বলেন, ছিনতাইকারীরা এ ধরনের কাজ করলে ইব্রাহিমের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ও মোবাইল সেট পাওয়া যেত না। তা ছাড়া তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। ইব্রাহিমকে কোথায় কোপানো হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ