সাবেক স্ত্রীর হামলার শিকার এএসপি আসিফ আল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক (গাজীপুর), এবিসিনিউজবিডি, (২৮ ডিসেম্বর) : ময়মনসিংহ ডিআইজি কার্যালয়ে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ৩৮তম বিসিএসের এস এম আসিফ আল হাসান শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ সৃষ্ট এ ঘটনার কারণে এলাকায় কিছু সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জিএমপি পুলিশের উপস্থিতিতেই এএসপি আসিফ আল হাসান শারীরিকভাবে আহত হন বলে স্থানীয়রা জানান। পরে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে এবং ঘটনার প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এর আগে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আসিফ আল হাসানের বিরুদ্ধে ডিভোর্সের পর পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ও পারিবারিক সূত্রের দাবি, তার সাবেক স্ত্রী সুবর্ণা সুলতানা সুমী ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দায়ের, কাবিনের অতিরিক্ত কোটি টাকা দাবি এবং নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর সুমী নিজেকে এএসপির স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পল্লবী থানায় ফারজানা আক্তার নামে এক নারীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। তবে তদন্ত শেষে এসআই মোবারক অভিযোগের কোনো সত্যতা পাননি। বরং তদন্তে উঠে আসে, সুমী নিজেই ওই নারীকে ফোন করেছিলেন এবং ঘটনার পেছনে একটি চক্রের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ, বেপরোয়া আচরণ এবং পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয় ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের কারণে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ফলে ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর এক পারিবারিক বৈঠকে সুমীর পরিবার ডিভোর্সের প্রস্তাব দেয়। এর পরদিনই সুমী পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এএসপি আসিফ আল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন এবং পরবর্তীতে একই অভিযোগ পুনরায় জমা দেন।
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর এএসপি আসিফ আল হাসান তাকে ডিভোর্স প্রদান করেন। ডিভোর্সের পর সুমী বিভিন্ন সময় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশের চাকরি থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এছাড়াও এএসপি আসিফ আল হাসান ও তার পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দেন এবং চাঁদা দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এএসপি এস এম আসিফ আল হাসান তার সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার কারণে আলোচনায় আসেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। তিনি বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিএমপির শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা মামলায় তিনি গত জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালত ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন লাভ করেন। বিধি অনুযায়ী গ্রেপ্তার বা হেফাজতে নেওয়ার দিন থেকেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা পাবেন।
এ বিষয়ে এএসপি আসিফ আল হাসান বলেন, “মামলাটি তদন্তাধীন। আমি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছি এবং আইনি প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখছি।”
এএসপি আসিফের পরিবার জানান, বেপরোয়া চলাফেরা ও আচরনের করণে পারিবারিক স্বিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারী বিধি মোতাবেক তাকে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে। ডিভোর্সের ৩৭ দিন পর মিথ্যা যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতনের কাহিনী সাজিয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিস্তারিত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।
মনোয়ারুল হক/
