৩ দিন পর হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলা, পলাতকদের খোঁজে মাঠে গোয়েন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৬ ডিসেম্বর) : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার তিন দিন পর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। এতে সন্দেহভাজন ‘শুটার’ ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এরই মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে মূল ‘শুটার’ ফয়সাল করিম মাসুদ বা বাইক চালানো আলমগীরের কোনো হদিস পাননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সূত্র ওই দুজনের সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়ার কথা বললেও সরকারিভাবে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু নিশ্চিত করা হয়নি। যদিও গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পলাতক আসামিদের খোঁজে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। হাদিকে গুলির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কেউ যাতে পালাতে না পারে সে জন্য দেশের সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যদের টহল রয়েছে।

গতকাল শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে মানব পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের দুই সহযোগীকে আটক করেছে বিজিবি। আটক ব্যক্তিরা হলেন- ফিলিপের ছেলে বেঞ্জামিন চিড়ান (৩০) এবং নিকোলাস রেমার ছেলে চিসল নেংমিনজা (২৩)। এর আগে রবিবার সন্দেহভাজন ‘শুটার’ ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের স্ত্রী বেগম সামিয়া, শ্যালক শিপু ও ফয়সাল করিমের বান্ধবী মারিয়াকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

গতকাল ময়মনসিংহ ৩৯ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানরত ফিলিপ স্যানাল নামে একজনকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অঞ্চলটি দিয়ে ভারতে পালালে ফিলিপ ভালো বলতে পারবেন, তবে ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। ফিলিপের স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি ও মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারোমারী বিওপিতে আনা হয়েছে। গতকাল ভোরে ফিলিপ স্যানালের ছেলে বেঞ্জামিন চিড়ানকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তারা হলেন সিবিয়িন ডিও ও সঞ্জয় চিসিম।

এদিকে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি-র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরাও অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি আরও বলেন, হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে গেছে কি না, তা পুরোপুরি এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সীমান্ত পার হয়ে থাকেন, তাহলে ফিলিপ স্যানাল ভালো বলতে পারবেন। ফিলিপ স্যানালকে আটক করা গেলে পুরো বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি-সহায়তায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান, মোটরসাইকেলের মালিক আবদুল হান্নানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনো কোনো সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি সন্দেহভাজন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

তিন দিন পর হত্যাচেষ্টা মামলা

রবিবার রাতে ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা (মামলা নং-১৯) হয়। মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। থানার পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযান চলছে। এই ঘটনা খুব গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে থেকে সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ছবিসহ তথ্য পাঠানো হয়েছে- যাতে সন্দেহভাজনরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও র‍্যাবের জোরদার টহল রয়েছে। এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে– এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এরই মাঝে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় অবস্থিত ওসমান হাদির বাড়িতে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়াতে গত রবিবার থেকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। গতকাল ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বায়েজিদ ইবনে আকবর হাদির বাড়ি পরিদর্শন করেন।

হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সারা দেশে চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে তার নলছিটির বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তার পরিবারের সবাই ঢাকায় ছুটে যান। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা জানালা ভেঙে তার গ্রামের বাড়িতে চুরি করে।

গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট সড়কে ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা আততায়ী তাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়ে, যেটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ