বরিশাল-ভোলা সেতু আজও অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক (বরিশাল), এবিসিনিউজবিডি, (১১ ডিসেম্বর) : বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। বরিশাল বিভাগের এ জেলার সঙ্গে সড়কপথে অন্য জেলার সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। প্রায় ২৫ লাখের বেশি মানুষ এই জেলায় বসবাস করেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে তারা বরিশালের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাদের আন্দোলন এখনো চলমান রয়েছে। অথচ ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের এই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। গত এক যুগ ধরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কেবল আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, অর্থসংস্থান না হওয়ায় প্রকল্পটি এতদিন আলোর মুখ দেখেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান এই ব্রিজের জন্য অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

গত ৭ ডিসেম্বর বরিশালের বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খানের বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, ‘ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণকাজ খুবই ব্যয়বহুল। তবে কাঁট-ছাঁট করে এটির ব্যয় কমিয়ে একটি মাল্টিপল সেতু নির্মাণ করার কাজ চলছে। এ সেতু নির্মাণে সরকারের আগ্রহ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের জন্য জাপানের একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরবর্তী সরকার সেতুটির কাজ বাস্তবায়ন করবে।’

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে বরিশাল-ভোলা সড়কের কালাবদর ও তেতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জরিপ শুরু হয়। পরে ওই জরিপের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সেতু কর্তৃপক্ষের ‘মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন’ প্রকল্পের আওতায় আবারও যাচাই করা হয়। এ ছাড়া প্রস্তুত করা হালনাগাদ খসড়া (পিডিপিপি) চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে একই দিন সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়।

জানা গেছে, প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। ১০ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু– যা দ্বীপ জেলা ভোলাকে স্থায়ীভাবে সড়কপথে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করবে।

বিবিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোলা-বরিশাল সেতুর সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সেতুটি হলে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া আগামী ৩০ বছরে জিডিপিতে ০.৮৬ শতাংশ অবদান রাখবে। পাশাপাশি ভোলা থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহও সহজ হবে। ২০৩৩ সালের মধ্যে সেতুটির কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। মিয়াগাওয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘কনস্ট্রাকশন অব ভোলা ব্রিজ অন বরিশাল-ভোলা রোড ওভার দ্য রিভার তেঁতুলিয়া অ্যান্ড কালাবদর’ প্রকল্পটির জন্য চীন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ও বিশ্বব্যাংকসহ যেকোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সিংহভাগ অর্থপ্রাপ্তির আশা করছে।

এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে সেখান থেকে এখনো কোনো জবাব আসেনি। যদি কোনো কারণে জাপান অর্থায়ন না করে, সে বিবেচনায় বিকল্প অর্থায়নের খোঁজ চালানো হচ্ছে।

সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে এরই মধ্যে ফ্রেঞ্চ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি), জাপানের অফিস অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) ও এডিবির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বৈদেশিক সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে ইআরডিকে অনুরোধ করা হয়।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মিত হলে দুই জেলার মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সহজ যোগাযোগের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার ঘটবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।’

গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিনের নেতৃত্বে সকারের উচ্চপর্যায়ের একটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন। তখন শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার এই সেতু নিয়ে ইতিবাচক রয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ডিজাইনের (নকশা) কাজ শুরু হবে। এতে প্রায় এক বছর লাগবে। তারপর ভূমি অধিগ্রহণেও এক বছর যাবে। পিপিপিতে কাজটা হবে নাকি ঋণ করতে হবে, সেই সিদ্ধান্তও এই সময়ের মধ্যে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে দীর্ঘসময় নেই। তবে আমরা কাজটা শুরু করে দিয়ে যেতে চাই। ডিজাইনের কাজ শুরু হলে পরবর্তী সরকার কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ