এক রাজনৈতিক কিংবদন্তির পথচলা, আপোষহীন সংগ্রাম থেকে ভিভিআইপি মর্যাদা
বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২ ডিসেম্বর) : বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দীর্ঘ সময় দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রীদের একজন এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি যেমন দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, কারাভোগ, রাজনৈতিক প্রতিকূলতা এবং ব্যক্তিগত শারীরিক সংকট সবকিছুকে অতিক্রম করেছেন দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে।
বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতিতে নিরাপত্তা ও চিকিৎসার গুরুত্ব বিবেচনায় তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার যা তাঁর রাজনৈতিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় অবদানের প্রতি এক বিশেষ স্বীকৃতি।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। স্বামী হত্যার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ ছিল আকস্মিক, তবে সময়ের সাথে তিনি হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের অন্যতম শক্তিশালী প্রতীক।
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে আবারও বিপুল ভোটে জিতে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ অর্থনীতি, অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং প্রবাসী জনশক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে।
বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সবসময় পরিচিত ছিলেন আপোষহীন নেত্রী হিসেবে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, চাপের মুখে কঠোর অবস্থান, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রাম এসব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট সবকিছুতে তিনি বহুবার গৃহবন্দিত্ব, আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন, তবে তাঁর অবস্থান ছিল অটল।
২০১৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাভোগ করেন যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায়।
বয়স ও শারীরিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়। পরবর্তীতে মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষ মুক্তি দেওয়া হয়, তবে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা তখন থেকেই বাড়তে থাকে।
এই সময়টি বিএনপির রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিবাদ দেখা যায়। খালেদা জিয়ার কারাবরণকে বিএনপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করে।
দীর্ঘদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়া লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র, ডায়াবেটিসসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন। নিয়মিত বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়ায় তাঁর গৃহ অবস্থান, হাসপাতালে যাতায়াত ও নিরাপত্তা সবই অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিকিৎসকরা বারবার বলেছেন তাঁর জন্য আধুনিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক অবদান, দলীয় নেতৃত্ব, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাঁর ভূমিকা এবং বর্তমান শারীরিক সংকট বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে VVIP (Very Very Important Person) মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই মর্যাদার মাধ্যমে তাঁকে দেওয়া হবে :
সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
বিশেষায়িত মেডিকেল প্রোটোকল
রাষ্ট্রীয় যাতায়াত সুবিধা
হাসপাতাল-বাসা যাতায়াতে সরকারী এসকর্ট
চিকিৎসা তদারকিতে বিশেষ কমিটি
এটি তাঁর রাজনৈতিক মর্যাদা ও জাতীয় অবদানের প্রতি এক বড় ধরনের সম্মান।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুধু ক্ষমতার গল্প নয় এটি সংগ্রাম, সাহস, ত্যাগ ও অটল নিষ্ঠার গল্প।
দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই, বারবার প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া, কারাভোগ, এবং আজকের শারীরিক সংকট এসব কিছু তাঁকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
তাঁকে ভিভিআইপি মর্যাদা প্রদান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক ধরনের স্বীকৃতি, যে তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতীক।
মনোয়ারুল হক/
