শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদারে সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১ ডিসেম্বর) : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার জাতির জন্য একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। নির্বাচনে মিডিয়া এবং সকল অংশীজনের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করলে ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, একটি বিস্তৃত নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসেবে, সরকার নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনীসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রায় নয় লাখ কর্মী মোতায়েন করবে।

সকল সংস্থার সদস্যদের জন্য নির্বাচনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করা হয়। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বডি-ওয়্যার ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠতম পুলিশ কর্মকর্তা এই ডিভাইসটি পরিচালনা করবেন।

দলীয় প্রভাব রোধ এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য, ৬৪টি জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে বদলি করা হয়েছে এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সামনে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করা হবে।

সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে বদলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর পদায়ন ও বদলির পূর্ণ কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নিরপেক্ষতা জোরদার করার জন্য গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। ডিসি, ইউএনও, এসপি এবং ওসিসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রধান প্রশাসকদের মধ্যে মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা, লজিস্টিক সহায়তা এবং সমন্বয় নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজনীতিবিদদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন।

গত সাত সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নির্বাচন-দায়িত্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সততা, ধৈর্য এবং চাঁদাবাজি ও মাদক সম্পর্কিত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতি জোর দেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো মোবাইল এবং রিজার্ভ উপাদানগুলোর পাশাপাশি এনটিএমসির মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে। সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা জোরদারে প্রায় ১ লাখ সেনা সদস্য, ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য, আনসারের ৫ লাখ ৫০ হাজার, ৩৫ হাজার বিজিবি সদস্য, র‌্যাবের প্রায় ৮ হাজার সদস্য, নৌবাহিনীর ৫ হাজার ও কোস্টগার্ডের ৪ হাজার সদস্য নির্বাচনে মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিনিয়র অফিসারের কাছে বডিওর্ন ক্যামেরা থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজিবি জানিয়েছে, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য দেশব্যাপী মোট ১ হাজার ২১০ প্লাটুন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।

সন্দ্বীপ, হাতিয়া এবং কুতুবদিয়া ছাড়া সকল উপজেলায় বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন এবং ১১৫টি সীমান্তবর্তী উপজেলার মধ্যে ৬০টিতে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।

বিজিবি সদস্যদের জন্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ২৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছিল। চার ধাপে প্রশিক্ষণটি ২২ জানুয়ারি, ২০২৬ পর্যন্ত চলবে।

সূত্র: বাসস

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ