কাজে আসছে না ৭ কোটি টাকার সেতু
নিজস্ব প্রতিবেদক (চুয়াডাঙ্গা), এবিসি নিউজ, (৮ অক্টোবর) : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত পৌনে ৭ কোটি টাকার একটি সেতু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিন বছর আগে সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনো সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় সংযোগ সড়কের কাজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। অথচ সেতুটি নির্মাণের আগে শর্ত ছিল, সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও উপযোগিতা পরীক্ষা করতে হবে। কোনো জটিলতা দেখা দিলে দরপত্র আহ্বানের আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কিন্তু সে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় পৌনে ৭ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর দুই পাশে কোনো সড়ক না থাকায় এটি এখন সড়কবিহীন সেতুতে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন স্থানীয়দের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় অথবা বাঁশের সাঁকোতে নদী পার হতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন যানবাহন চালকদের অতিরিক্ত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি নিরসনে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ টাকা। দরপত্র আহ্বানের পর কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুরুজ্জামান মিয়া ও সৈকত এন্টারপ্রাইজ জেভিসির সঙ্গে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকায় নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি গঞ্জেরঘাট প্রান্তে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৮ আগস্টের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটি এখনো চালু করা যায়নি।
স্থানীয় কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন কৃষিকাজের জন্য পাঁচ-সাতবার নদী পার হতে হয়। পাশেই তিন বছর আগে নির্মিত সেতু থাকলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে নৌকা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে হয়।’
সুমাইয়া আক্তার নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন কলেজ ও কোচিংয়ের জন্য শহরে যেতে হয়। ব্রিজ তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা এখনো নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছি। সেতুটি চালু হলে আমাদের কষ্ট অনেকটা কমে যেত।’
এ ছাড়া স্থানীয় তরুণ মো. সজীব বলেন, ‘জেলায় থাকা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নদীর ওপারে। সরাসরি গেলে মাত্র দুই কিলোমিটার পথ, কিন্তু সড়ক না থাকায় আমাদের ১৩-১৪ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হই।’
এ বিষয়ে এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সংযোগ সড়কের জন্য জমির মালিকদের আংশিক অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে দ্রুত সেতুটি চালু করা হবে।’
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সেতুর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে, তবে সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসন হলে নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় তা এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করে সেতুটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’