জরায়ু ক্যানসারের ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি

স্বাস্থ্য ডেস্ক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (৭ অক্টোবর) : উন্নত বিশ্বের নারীর মধ্যে জননাঙ্গের ক্যানসারগুলোর মধ্যে জরায়ু ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই এ ক্যানসার সম্পর্কে গণসচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।

জরায়ুমুখ বা সার্ভাইকাল ক্যানসারের জন্য যেমন প্রতিষেধক টিকা (এইচপিভি ভ্যাকসিন) বিদ্যমান, জরায়ু ক্যানসারের জন্য তেমন কোনো কার্যকর টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে এ রোগ প্রতিরোধের প্রধান কৌশল হলো- প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা এবং যথাসময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করা।

যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ : জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সাধারণত বয়স্ক নারীর মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যে মেনোপজে পৌঁছেছেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থা এ ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। যেমন- স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ, নিঃসন্তান নারী বা যাদের সন্তানের সংখ্যা খুব কম, দীর্ঘমেয়াদে হরমোন থেরাপি গ্রহণকারী নারী। এছাড়া পারিবারিকভাবে জরায়ু ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ইত্যাদি জেনেটিক রোগে আক্রান্ত সদস্যের উপস্থিতি (ফলে জেনেটিক মিউটেশনের আশঙ্কা থাকে)।

লক্ষণ : এ ক্যানসারের বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় নজরে আনতে পারলে রোগ শনাক্তকরণ সহজ হয় এবং চিকিৎসার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়। যেমন- মাসিকের সময় অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত রক্তপাত। মেনোপজের পর যে-কোনো রকম রক্তস্রাব। অনিয়মিত মাসিক চক্র। ৪৫ বছরের পর নারীর ক্ষেত্রে মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া। তলপেটে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া বা দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গও রোগ জটিল হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

রোগ শনাক্তকরণ পদ্ধতি : উপরিউক্ত উপসর্গগুলোর যে-কোনো একটি দেখা দিলে অবহেলা না করে গাইনি অনকোলজির অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে বায়োপসিসহ অন্যান্য আধুনিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে থাকেন। ক্যানসার শনাক্ত হলে রোগটি শরীরের কোন কোন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিরূপণের জন্য সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পেট স্ক্যান ইত্যাদি উন্নত টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসা পদ্ধতি : জরায়ু ক্যানসার চিকিৎসায় রোগের পর্যায়ভেদে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত অপারেশন বা সার্জারিই প্রধান চিকিৎসা। তবে রোগের বিস্তার বা জটিলতা অনুসারে রোগীর প্রয়োজনে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি দেওয়া হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত হলে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হন। কিন্তু দেরিতে রোগ ধরা পড়লে তা প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে।

জরায়ু ক্যানসার একটি নীরব ঘাতক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়া ও চিকিৎসা গ্রহণের একমাত্র উপায় হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি। নারীর উচিত নিজ দেহের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে অভিজ্ঞ অনকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া।

লেখক : ডা. মো. ইয়াকুব আলী, অধ্যাপক এবং রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সাভার।

চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৭৪৫৩৪৯৪১০, ০১৭৩২৪২৯৩৯০

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ