শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দাবি বিএনপির, জামায়াত বলছে বক্তব্যটি ব্যক্তিগত
চট্টগ্রাম ব্যুরো, আলোকিত সময়, (২৪ নভেম্বর) : চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আবার জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে তীব্র নিন্দা, গভীর ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান।
গতকাল রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের কারণে শাহজাহান চৌধুরীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণকে দিয়ে নয়। আমি ন্যাশনালি বলব না, যার যার নির্বাচনী এলাকায়, প্রশাসনে যারা আছে, তাদেরকে অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, বসবে, গ্রেপ্তার করবে, মামলা করবে।’ পরে তার বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশ আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রোটোকল দেবে।’
এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিবৃতিতে মহানগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা আরো বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরীর এই মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং স্পষ্টতই ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ। প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত এবং জনগণের ভোটাধিকারকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য প্রদান রাজনৈতিক দায়িত্ববোধবর্জিত আচরণের জঘন্য উদাহরণ। এটি দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত একটি অপতৎপরতারই অংশ।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব যৌথ বিবৃতিতে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, শাহজাহান চৌধুরীকে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
জামায়াত বলছে, বক্তব্যটি ব্যক্তিগত
শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টির পর জামায়াত নেতারা ওই বক্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, এটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কোনো বক্তব্য নয়।
দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারি নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে। এখানে দলীয় হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। কারণ এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
এ ছাড়া শাহজাহান চৌধুরী নিজেও তার ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের বিষয়ে দাবি করেছেন, খণ্ডিত বক্তব্য প্রচারে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি যে বক্তব্যটা রেখেছি সেটা হলো—আমাদের প্রশাসন দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের স্বার্থে পুলিশকে কাজ করতে হবে। আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।’
মনোয়ারুল হক/
