গণভোটের জন্য ইসির স্পষ্ট নীতিমালা দাবি এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৯ নভেম্বর) : আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণভোট প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরির দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
তিনি নারী ভোটার সুরক্ষা, প্রবাসী ভোটার, তরুণদের অংশগ্রহণ এবং ভোটার তালিকায় নতুন প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও উদ্বেগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গণভোট বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিন পর একটি বড় প্রক্রিয়া হতে যাচ্ছে। তাই এর বাস্তবায়নপদ্ধতি, নীতিমালা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে দ্রুত স্পষ্ট ঘোষণা প্রয়োজন।
ইসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন,’গণভোট কীভাবে হবে, কবে নীতিমালা পাব—এটা দ্রুত জানানো জরুরি। সময় খুবই কম। সরকার থেকেও এখনও নির্দেশনা আসেনি। আপনারা চাইলে আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘ইসি যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখতে পারে, তাহলে আমাদের দল ১০০% সহযোগিতা করবে। ইসি সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ থাকুক, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নয়— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
নারী কর্মীরা প্রায়ই অনলাইন হয়রানির শিকার হন জানিয়ে তিনি নির্বাচনের সময় এ ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন। এ কারণে ইসির অধীনে একটি মনিটরিং সেল গঠনের অনুরোধ জানান।
তার ভাষায়, “নারী সহযোগীরা প্রতিদিন সাইবার হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। নির্বাচনের সময় এটি আরও বাড়বে। তাই একটি মনিটরিং সেল গঠন করলে নারীদের অংশগ্রহণ সুরক্ষিত হবে।”
নির্বাচনকে উৎসবমুখর রাখা এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি বিশৃঙ্খলা হয়, তরুণদের যে গণতান্ত্রিক বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তারা অন্য পথে চলে যেতে পারে—যা কারও জন্য ভালো নয়।’
প্রবাসী ভোটারদের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর দাবি
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের সীমিত সময়সীমা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা ব্যাপক উদ্বেগ জানিয়েছেন। সময় বৃদ্ধি বা আগে থেকে নিবন্ধন চালু করলে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি হতো। এখন তা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
প্রতীক নিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ অন্যের পোশাক পরে এলে তাকে চিনতে সমস্যা হয়, তেমনি অন্যের প্রতীকে নির্বাচন করলে পরিচয় স্পষ্ট হয় না। তাই নিজের প্রতীকের মূল্য বুঝতে হবে।’
নির্বাচন–সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন বা অভিযোগ জানানোর জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একজন করে কর্মকর্তা যুক্ত করার অনুরোধ জানান তিনি। বিকল্প হিসেবে মনিটরিং সেল গঠনের কথাও বলেন।
১৮ বছর পূর্ণ হলেই ভোটাধিকার— এ নীতির আলোকে নির্বাচনের দিনে বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়া ভোটারদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান তিনি।
তার ভাষায়, ‘যেদিন ভোট হবে, সেদিন কারও বয়স ১৮ পূর্ণ হলে তাকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এটি তার মৌলিক অধিকার।’
এই নীতিমালাকে আরও মানবিকভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
সংলাপ শেষে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইসি যদি স্বাধীনতা বজায় রেখে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন পরিচালনা করে, তাহলে তার দলসহ সব রাজনৈতিক দলই সহযোগিতা করবে।
