বিসিবি নির্বাচনে বাধা নেই, আমিনুলের চিঠি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত
ক্রীড়া প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (২৮ সেপ্টেম্বর) : বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন সামনে রেখে সাধারণ পরিষদে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে বোর্ডের সভাপতি আমিনুল ইসলামের ১৮ সেপ্টেম্বরের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তাতে স্থগিতাদেশ আগামী রোববার পর্যন্ত চলমান থাকবে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ রোববার এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে রোববার শুনানির জন্য দিন রেখেছেন আদালত।
হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ চলমান থাকায় বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপাতত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বোর্ডের আইনজীবী মাহিন এম রহমান।
এর আগে বিসিবির সাধারণ পরিষদে কাউন্সিলর মনোনয়নের ফরম বাতিল করে নতুন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে জমা দিতে আমিনুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিভাগীয়/জেলা ক্রীড়া সংস্থা বরাবর চিঠি দেন। এই চিঠির বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ২২ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন। বিসিবির সভাপতির ১৮ সেপ্টেম্বরের চিঠির কার্যকারিতা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেদিন বিকেলে তা চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে সেদিন চেম্বার আদালত আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, শুনানি ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হলো, সে সময় পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।
এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আজকের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ১৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ শুনানিতে ছিলেন।
অন্যদিকে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানিতে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম।
বিসিবির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহিন এম রহমান।
‘আইনের চোখে সবাই সমান’
হাইকোর্ট ২২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আদেশ দিয়েছিলেন। তখন সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্যাভিয়েট (হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের বিষয়ে অবহিত করা) দায়েরের সুযোগ ছিল না। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এতে দ্রুত কীভাবে আবেদন করেছে, তা নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ বলেন, যথাসময়ে নিয়ম মেনেই আবেদনটি করা হয়েছে।
শুনানির এক পর্যায়ে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আমাদের চোখে মামলা মানে আইন। আইনের চোখে সবাই সমান।’
শুনানির পর হাইকোর্টের আদেশে এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান থাকবে উল্লেখ করে আদেশ দেন চেম্বার আদালত। পাশাপাশি সেদিন (২২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কয়টা পর্যন্ত কাজ চলেছে, তা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে জানাতে বলেছেন আদালত।
আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগের অফিসের সময়সূচিসংক্রান্ত ২৭ আগস্টের বিজ্ঞপ্তি আদালতে তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, অফিসের সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। সাড়ে তিনটায় হাইকোর্টের আদেশের পর কোনোভাবে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাফিডেভিট (আবেদন করার জন্য) করা সম্ভব ছিল না। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ক্যাভিয়েট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাঁর এই বক্তব্যসংবলিত অভিযোগ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে রোববার শুনানি হবে।
তফসিল অনুযায়ী, বিসিবির নির্বাচনের তারিখ ৬ অক্টোবর। পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচিত ২৫ জন পরিচালকের মধ্য থেকে বোর্ড সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বিসিবির সাধারণ পরিষদের সদস্যরাই (কাউন্সিলর) পরিচালক পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। সবশেষ বিসিবি নির্বাচনে কাউন্সিলদের সংখ্যা ছিল ১৭০ জনের মতো।
প্রথমে কাউন্সিলরদের নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী কালে সময় বাড়িয়ে তা ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা করা হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র (২০২৪ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী সাধারণ পরিষদের কাউন্সিলরের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে’ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিভাগীয়/জেলা ক্রীড়া সংস্থা বরাবরে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামের সই করা চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বিসিবির কাউন্সিলর হিসেবে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে নাম প্রেরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। আগের ফরম বাতিল করে বিসিবি থেকে পাঠানো নতুন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে কাউন্সিলরের নাম পাঠাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এই চিঠির বৈধতা নিয়ে এ বি এম মনজুরুল আলমসহ চারজন কাউন্সিলর (১৮ সেপ্টেম্বরের আগে মনোনীত) ২২ সেপ্টেম্বর রিট করেন। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলামের ১৮ সেপ্টেম্বর সই করা চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন হাইকোর্টের আদেশ ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এই স্থগিতাদেশ ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান থাকবে বলে আজ আদেশ দেন চেম্বার আদালত।