ট্রাম্প-মামদানি সংঘাতের সূচনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, (৭ নভেম্বর) : নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে জোহরান মামদানি শুধু শহরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ই লিখলেন না, বরং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক নতুন রাজনৈতিক সংঘাতেরও সূচনা করলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরই মামদানি ট্রাম্পকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘আরও জোরে চিৎকার করুন।’ এর আগে ট্রাম্প তাকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আক্রমণ করে ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দেন। কিন্তু মামদানি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ভীত নন এবং শহরকে ‘ট্রাম্প প্রুফ’ করবেন।
নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্পের সঙ্গে মামদানির দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুজনের নতুন এই দ্বন্দ্ব এখন দেশটির জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আর এর মূলে রয়েছে একদিকে ট্রাম্পের ক্ষমতা, অন্যদিকে মামদানির জনমুখী পরিবর্তনের অঙ্গীকার।
গত মঙ্গলবার রাতে বিজয় ভাষণে তিনি সরাসরি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার প্রতি আমার চারটি শব্দ আছে ‘আরও জোরে চিৎকার করুন’।” হোয়াইট হাউস পরে নিশ্চিত করে, ট্রাম্প মামদানির বিজয় ভাষণ সরাসরি দেখেছিলেন।
মামদানির এই বক্তব্যের পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, দুই নিউইয়র্কারের মধ্যে এই সম্পর্ক এখন থেকে আরও তীব্র ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পেরও নিজ শহর নিউইয়র্ক। সেখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের দুজনের এই দ্বন্দ্বের ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বাসিল স্মিকল বলেন, ‘এটা একটা সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক হবে, এটিই ধারণা করা হচ্ছে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানি নিউইয়র্কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে নিশানা করে আসছিলেন ট্রাম্প। তাকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া মামদানি ভোটে জিতলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘যদি নিউইয়র্ক একটি কমিউনিস্ট মেয়র বেছে নেয়, তা হলে আমি ওই শহরের জন্য ফেডারেল অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেব, যতক্ষণ না আইন আমাকে তা দিতে বাধ্য করছে।’ তিনি সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যদি তোমাদের একজন কমিউনিস্ট মেয়র থাকে, তাহলে সেখানে টাকা পাঠানো মানে অপচয়।’
তবে ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক আক্রমণের পরেও নিউইয়র্কের মেয়র পদের জন্য নির্বাচিত হলেন মামদানি। আর জয়ের পর মামদানিকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাননি ট্রাম্প।
গত বুধবার ভোরে সংবাদমাধ্যমকে মামদানি বলেন, ‘ট্রাম্পের হুমকি অনিবার্য। এটা নিরাপত্তার জন্য নয়, এটা ভীতি প্রদর্শনের জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি নিরাপত্তাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে প্রেসিডেন্ট শীর্ষ ১০ অপরাধপ্রবণ রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতেন—যার মধ্যে আটটি রিপাবলিকানশাসিত।’
ট্রাম্প নির্বাচনের রাতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল ট্রুথে লেখেন, ‘এবং সেটাই শুরু হলো!’ গত বুধবার ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘তার ভাগ্য ভালো ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল ছিল। তাকে ওয়াশিংটনের প্রতি কিছুটা সম্মান দেখাতে হবে। তবে আমি চাই নিউইয়র্ক শহর সফল হোক। তবে আমি চাই না সে (মামদানি) সফল হোক।’
এদিকে বুধবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মামদানি বলেন, ‘আমরা দুটি সংকটের মুখে আছি—একটি কর্তৃত্ববাদী প্রশাসন এবং একটি জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট। আমার কাজ হবে দুটোই সামলানো।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিউইয়র্কের নাগরিকদের জন্য কাজ করতে চাই এবং প্রেসিডেন্টের হুমকিতে ভীত নই। আমি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে প্রস্তুত—যদি তা নিউইয়র্কবাসীর উপকারে আসে। কিন্তু যদি আলোচনার বিষয় হয় পরিবারে ভয় ছড়ানো, স্কুল বা অবকাঠামোর অর্থ কেটে নেওয়া, তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে লড়ব।’
ট্রাম্প এর আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি জিতলে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করবেন এবং প্রয়োজনে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাবেন। তবে মামদানি বলেছেন, তিনি শহরকে ‘ট্রাম্প প্রুফ’ করতে চান- অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের নীতির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিউইয়র্কবাসীকে রক্ষা করতে চান। তিনি বলেন, ‘যাদের হাতে ক্ষমতা সবচেয়ে কম, তাদের রক্ষা করা হবে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তির প্রভাব থেকে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডীয় শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে মামদানি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হন এবং নিউইয়র্ক সিটিতে স্থায়ী হন।
মামদানি বলেন, ‘নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর। এটি অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারাই চালিত এবং আজ থেকে তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, শুনুন- আমাদের কাউকে আঘাত করতে চাইলে সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যান্থনি কোলি বলেন, ‘ট্রাম্প হয়তো তহবিল বন্ধ করে মামদানিকে শাস্তি দিতে চাইবেন, কিন্তু মামদানি জানেন তরুণদের সংগঠিত করতে, যারা ট্রাম্পকেও একসময় জয় এনে দিয়েছিল।’
অন্যদিকে বিশ্লেষক জোয়েল পেইন মনে করেন, ‘মামদানি এখন জনপ্রিয়, কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে লাগাতার সংঘাত তার প্রশাসনের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাকে বেছে নিতে হবে কোন লড়াই তিনি লড়তে চান।’
নির্বাচন-পরবর্তী উদ্দীপ্ত জনসভায় মামদানি বলেন, ‘যদি কেউ ট্রাম্পের দ্বারা প্রতারিত এক জাতিকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তা হলো সেই শহর- নিউইয়র্ক, যে শহর তাকে সৃষ্টি করেছে। আর যদি কোনো স্বৈরাচারীকে ভয় দেখানোর উপায় থাকে, তা হলো সেই পরিস্থিতিগুলো ভেঙে ফেলা, যা তাকে ক্ষমতায় এনেছিল।’ সূত্র: এপি, বিবিসি
