হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলবে
নিজস্ব প্রতিবেদক (সিরাজগঞ্জ), এবিসিনিউজবিডি, (৬ নভেম্বর) : কাজের গতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী বছর আগস্ট মাসে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এ স্থাপনার কাজ ইতোমধ্যে ৫৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। এতে এখনই সড়ক ব্যবহারকারীরা এর কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ শেষ হলে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ শুধু যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
৭৪৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘সাউথ এশিয়া সাব-রিজিয়নাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায়। কাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের পাবনা, বগুড়া ও রাজশাহীসহ দক্ষিণাঞ্চলের আরও ১৯টি জেলার যান চলাচল সহজ হবে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘ইন্টারচেঞ্জে লেনগুলোর নিচে ঝুঁকিমুক্ত দীর্ঘস্থায়ী পট ও রাবার বিয়ারিং থাকছে। ফলে যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে না। পুরো এলাকা হবে শতভাগ যানজটমুক্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূল সড়কের পাশে মোটরসাইকেল ও সাইকেল চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকছে। ইন্টারচেঞ্জের ওপর লেন পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। এ প্রকল্প শেষ হলে এটি হবে দেশের সবচেয়ে সুন্দর ইন্টারচেঞ্জ।’
ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান জানান, প্রকল্পে যাত্রী ও চালকদের জন্য বিশ্রামাগার, ইনটেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেমসহ নানা সুবিধা থাকবে। ইন্টারচেঞ্জটি আলোকিত করবে নিজস্ব সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এতে মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে।
তার মতে, ‘আগামী ৪০ বছর পর্যন্ত এই ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে নির্বিঘ্নে যান চলাচল সম্ভব হবে। বর্তমানে যেখানে দিনে গড়ে ১৮ হাজার যানবাহন চলে, কাজ শেষ হলে তা বাড়বে ৪০ হাজারে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনে প্রাকৃতিক দৃশ্য আর রাতে আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ পর্যটকদের কাছে এলাকাটিকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। তারা বলছেন, কাজ শেষ হলে এখানে গড়ে উঠতে পারে রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ। দূরপাল্লার যানবাহনকে ঘিরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ।
ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান আরও জানান, ‘নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে ৯ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ থাকবে। ব্যয় হতে পারে প্রায় ৮ কোটি টাকা।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ৪০ বছরের ব্যবহার বিবেচনায় রেখে ইন্টারচেঞ্জের নকশা তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। পরিবেশগত পরিস্থিতি বা নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে, তবে তা ২০০ কোটির মধ্যে থাকবে বলে আশা করা যায়।’
২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও পিলার তৈরিসহ মূল কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ইতোমধ্যে পাবনা ও বগুড়ার দিকে দুটি লেন আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হওয়ায় প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ অংশই এখন দোকানমুক্ত ও যানজটহীন।
হাটিকুমরুল এলাকার রিকশাচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আগে যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, যানজট নেই, আয়ও বেড়েছে।’ তিনি জানান, রাস্তা চলাচল উপযোগী হওয়ায় এখন রিকশাচালকের সংখ্যাও বেড়েছে।
ওয়ালিপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রকল্পের কারণে অন্তত ৫ হাজার ক্ষুদ্র দোকানদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জমি ও স্থাপনা মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেলেও আমাদের মতো ভাসমান ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগই কিছু পাননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে হাটিকুমরুল এলাকায় লুঙ্গি, গামছা, ফল ও খাবারের অনেক ভাসমান দোকান ছিল। এখন সেগুলো উঠে গেছে।’
