ডিবি হারুনের শতকোটি টাকার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’

আনোয়ার আজমী, এবিসিনিউজবিডি, (১৭ আগস্ট ২০২৪) কিশোরগঞ্জ : মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। পুলিশের এক আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র। ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বিভাগে চাকরি নেন। কিন্তু তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মো. আবদুল হামিদের প্রভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় জায়গা পান তিনি। ডিএমপি’র সাবেক ডিবি প্রধান হারুন তার গ্রামের বাড়িতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনি¤œ ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া সুপার ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং রিসোর্ট উদ্বোধন উভয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা ছিল অন্যদের। এসব জায়গার মালিকদের দাম দেয়ার কথা বলে হারুন রিসোর্টের জন্য জায়গা দখলে নেন। জায়গার মালিকদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছেন। এসব জায়গার জন্য কেউই পুরো দাম পাননি। কেউ ১০ লাখের মধ্যে এক লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এমন হারে টাকা পেয়েছেন। জায়গার দাম না পাওয়ায় এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। তাদেরই একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ বণিক। তিনি জানান, হারুন রিসোর্ট করার কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা।
টাকা না পাওয়ায় জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি জানিয়ে দিলীপ বণিক বলেন, আমার মতো এমন অন্তত ১২ জন রয়েছেন, যাদের নামমাত্র টাকা দিয়ে জমি রিসোর্ট করার জন্য হারুন নিয়ে গেছে। আমরা জমির দলিল দেইনি। রিসোর্টের জন্য নেয়া ১২ আনার মতো জায়গার দলিল হয়েছে, বাকি জমির দলিল হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে দিলীপ বণিক বলেন, আমার জমির কাগজ ও দলিল রয়েছে। যেহেতু জমি বিক্রি করিনি তাই আমিই জমির মালিক।

এলাকাবাসীরা বলছেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতায় চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন উচ্চ পদে আসীন হতে পেরেছেন। মো. আবদুল হামিদ সে সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাকে খুশি করতে দাপুটে পুলিশ অফিসার হারুন তার রিসোর্টের নাম দিয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। ফলে নিজেদের তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা না থাকলেও রিসোর্টের জন্য জায়গা নিতে বেগ পেতে হয়নি। রিসোর্টটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সেখানে মাত্র একটি পুকুর ছিল। এখন চারপাশে গাছপালা, ডুপ্লেক্স কটেজ, কালচারাল সেন্টার, আউটডোরসহ নানা কারুকার্য সম্বলিত পাথরের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁ, শিশুপার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, লেকসহ নানা কিছু। সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র জগতের তারকা এবং ভিআইপি ব্যক্তিরা বিলাসবহুল রিসোর্টটিতে সময় কাটিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রিসোর্টটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিসোর্টে বুকিং চালু রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ