আম্ফানে লন্ডভন্ড সাতক্ষীরা, বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন (বিশেষ প্রতিবেদক), সাতক্ষীরা থেকে ফিরে : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরা। ২০ মে (বুধবার) বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ ঘূর্নিঝড়ে দেশের উপকূলীয় চারটি উপজেলার কমপক্ষে ২০ টিরও বেশি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর বাড়ি।

অসংখ্য গাছপালা উপড়ে অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার ব্রান্ড খ্যাত আমের। এদিকে শহরের কামাননগরে গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক নারী মারা গেছেন।

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্পটে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মত এলাকা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

এছাড়া কামালকাটি ও চন্ডিপুর এলাকায় পানি ওভার ফ্লো হয়ে লোকালয়ে ঢুকছে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখানি ও নাপিতখালী এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, হিজলা, দিঘলাররাইট, কোলা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা চলছে।

সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ায় এবং খুটি উপড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবা। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী এবিসিনিউজবিডিকে জানান, ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিবেগে গতকাল বিকাল ৪টার পর থেকে সুন্দরবন উপকূলে আম্ফান আছড়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে পশ্চিম দিকে ঝড়ো হাওয়াটি জেলা শহরের ওপর আঘাত হানে।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, আম্ফানের কারণে নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নদীর প্রবল জোয়ারে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দাঁতনেখালি, দূর্গাবাটি, পদ্মপুকুর ও গাবুরার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়েকটি স্থানে ওভারফ্লো হয়ে বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। কাঁচা ও টিনের ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ-গাছালি উপড়ে রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ১৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার ও ১ হাজার ৭০০ টি স্কুল কলেজসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় ১২ হাজার সেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ