তারেক রহমানের সংবর্ধনায় লাখ লাখ নেতা-কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৫ ডিসেম্বর) : ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল—দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা।

দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশ থেকে কয়েক লাখ নেতা-কর্মী ঢাকায় এসেছেন। অভ্যর্থনা কমিটির প্রত্যাশা, গণসংবর্ধনায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হবে। যেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।

গতকাল বুধবার থেকেই ঢাকামুখী হন বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা। লঞ্চ, বাস, ট্রেন, প্রাইভেট কার ও নিজস্ব উদ্যোগে ভাড়া করা গাড়িতে আসেন তারা। প্রতিটি বিভাগ থেকে তিন থেকে চার লাখ নেতা-কর্মী এবং প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত ৩০-৪০ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় জড়ো করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। এছাড়া বিমানবন্দর এলাকাসহ গোটা ঢাকা জনসমুদ্রে পরিণত করার টার্গেট ছিল বলে জানা গেছে।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে বাসা থেকে তারেক রহমান লন্ডনের হিথ্রো বিমানন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমানসহ পরিবারের পাঁচজনকে নিয়ে তিনি ঢাকায় অবতরণ করবেন। সিলেটে যাত্রাবিরতির পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বিমানটি।

তিনি জানান, সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিমানবন্দরের রজনীগন্ধা লাউঞ্জে তিনি ২০ মিনিট অবস্থান করবেন। সেখানে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সড়কপথে রওনা করবেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে লাখ লাখ নেতা-কর্মী তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার পথে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফুট) সড়কে তিনি সংক্ষিপ্ত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন। এরপর তিনি চলে যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে। সেখানে মায়ের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলবেন এবং মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবেন।  মায়ের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হবেন। জানা গেছে, গুলশানের মায়ের বাসা ফিরোজা নাকি ১৯৬ নম্বর নিজের বাড়িতে উঠবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জেলার লাখ লাখ নেতা-কর্মী ঢাকায়

প্রতিটি জেলার বিএনপির পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে বাস, ট্রেন, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ভাড়া করেছেন। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ও ট্রেনে করে ঢাকায় চলে এসেছেন। এ ছাড়া কোনো কোনো জেলায় তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আনন্দ মিছিল হয়েছে।

জনভোগান্তিতে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ বিএনপির 

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে অনিবার্য অত্যাবশ্যক এবং ন্যূনতম যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সে জন্য সৃষ্ট অসুবিধা ও কষ্টের জন্য দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তারেক রহমান এমন কোনো কর্মসূচিকে সমর্থন করেন না, যা জনদুর্ভোগের কারণ হতে পারে। তিনি রওনা হওয়ার সময় হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রবাসী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিত হতে নিষেধ করেছেন। ১৭ বছর ধরে অপেক্ষমাণ দেশের সব প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙা স্রোত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের নেই। তার পরও জনদুর্ভোগের জন্য আমরা অগ্রিম ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঢাকার ‘৩০০ ফুট সড়কের’ অনুষ্ঠানটি কোনো জনসভা নয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও নয়। কেবল দেশবাসীর প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশনেত্রীসহ দেশের সবার কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুষ্ঠান।

দলীয় নেতা-কর্মী এবং আপামর জনসাধারণ নিরাপত্তার মূল ভিত্তি

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলগত যে নিরাপত্তাব্যবস্থা সেটা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটা অংশ হলো চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। তারপর আমাদের দলীয় নেতা-কর্মী এবং সর্বোপরি দেশের আপামর জনসাধারণ হলো আমাদের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের সব ধরনের সহায়তার জন্য সরকার তার বিভিন্ন বাহিনী এবং সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

রেড, ইয়োলো ও হোয়াইট জোনে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়োলো ও হোয়াইট- এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) অংশগ্রহণ করে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রেড ও ইয়োলো জোনের বাইরে যে এলাকা থাকবে, সেটা বিবেচিত হবে হোয়াইট জোন হিসেবে। এই জোনে প্রবেশ করতে পারবেন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। তারেক রহমানের নিরাপত্তায় পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে।

এদিকে তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরই মধ্যে দেশে পৌঁছেছে।

বাসটি গত রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে। সোমবার এটি ঢাকায় পৌঁছায়। এর আগে তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি ‘হার্ড জিপ’ গাড়ি দেশে পৌঁছে। টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেলের এই গাড়ি ইতোমধ্যে বিএনপির নামে নিবন্ধিত হয়েছে।

সিলেটে বিমানবন্দরে ভিড় না করার নির্দেশ

লন্ডন থেকে দেশের সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর বিরতি দেবে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান। কিছু সময়ের এই বিরতিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় না করার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিলেট জেলার কোনো নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে ভিড় করবেন না। ঢাকায় এলে ওনাকে নিয়ে আমরা যে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি, সেখানে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে কথা বলবেন।

মঞ্চের আশপাশে বাড়ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভিড়

তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় বিশাল মঞ্চ তৈরি করেছে বিএনপি। বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট সড়কের একটি অংশজুড়ে এ মঞ্চ তৈরি হয়েছে। ৪৮ ফুট দীর্ঘ ৩৬ ফুট প্রশস্ত সড়ক থেকে ৮ ফুট উঁচুতে এ মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। প্রায় ৯০০ মাইক লাগানো হবে রাজধানীতে। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহপুর, বিশ্বরোড, বনানী হয়ে মহাখালী, যমুনা ফিউচার পার্ক, ৩০০ ফুটের রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে এসব মাইক। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

বিমানবন্দর ও এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষেধ

জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে গতকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল ও সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো প্রকার ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিমানবন্দর এলাকায় ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ