ওসির পদায়ন হবে যোগ্যতার মানদণ্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (৭ অক্টোবর) : থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়নে পুলিশ নিরস্ত্র ইন্সপেক্টরদের ফিটলিস্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর অংশ হিসেবে অতিরিক্ত আইজিকে (এইচআরএম) প্রধান করে একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওসি হতে প্রত্যাশী পুলিশ ইন্সপেক্টরদের কয়েক ধাপে মান যাচাইয়ের পর নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণদের ফিটলিস্টভুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই কমিটিকে। পুলিশ ইন্সপেক্টরদের থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করতে জেলা প্রশাসকদের মতো ফিটলিস্ট করতে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল। সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, টাকার জোরে কিংবা তদবির করে থানার ওসি হওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। এখন থেকে ওসি হিসেবে পদায়ন করতে সংশ্লিষ্ট নিরস্ত্র পুলিশ ইন্সপেক্টরের সততা, মেধা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে ফিটলিস্টভুক্ত করবে পুলিশ সদর দপ্তর। বিগত বছরগুলোয় থানার ওসি হতে টাকার জোর এবং প্রভাবশালীদের তদবির ছিল অন্যতম মানদণ্ড। নীতিমালা থাকলেও সেটা অনুসরণ করা হতো না। কিন্তু সামনের দিনগুলোয় মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওসি হওয়ার জন্য ফিট হওয়া যাবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেকশন কমিটিকে ফিটলিস্ট তৈরি করতে ছয়টি বিষয় দেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- প্রতি বছর কমপক্ষে একবার ফিটলিস্ট প্রণয়ন-সংক্রান্ত সভার আয়োজন; পুলিশ ইন্সপেক্টরদের (নিরস্ত্র) সার্ভিস রেকর্ড যাচাই-বাছাই; সততা, মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনায় নিতে হবে; ফিটলিস্ট প্রণয়নে পুলিশ সদর দপ্তর প্রণীত মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ; বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া এবং পুলিশ স্টেশন ম্যানেজমেন্ট কোর্স (পিএসএমসি) ও শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিতে হবে সিলেকশন কমিটিকে।
এ ছাড়া নিরস্ত্র ইন্সপেক্টরদের থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে ফিট হতে সততা ও নৈতিকতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনের দক্ষতা, প্রশাসনিক ও পেশাদারিত্ব কাজে সক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও ভাষাজ্ঞান, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী, গণমুখী ও সেবাধর্মী আচরণ, তথ্য ও প্রযুক্তিগত সম্যক জ্ঞান, কম্পিউটার (ওয়ার্ড, এক্সেল ও পিপি), সিডিআর (কল ডিটেইল রেকর্ড) ও সিডিএমএস বিশ্লেষণ, ফরেনসিকসহ অন্যান্য রিপোর্ট বিশ্লেষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণের মান যাচাই করতেও সিলেকশন কমিটিকে বলা হয়েছে।
সিলেকশন কমিটির সভাপতি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ বলেন, তাঁরা এখন বিভাগীয় পদোন্নতি ও নির্বাচনি ট্রেনিং নিয়ে ব্যস্ত। এ কাজ শেষ হলেই থানার অফিসার ইনচার্জদের ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করবেন।
কারা ওসি হতে পারবেন আর কারা পারবেন না এ বিষয়ে গত ৩ জুলাই মহাপুলিশ পরিদর্শক বাহারুল আলম নীতিমালা জারি করেন। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, ৫৪ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সী কোনো ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) এখন থেকে আর থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। এ ছাড়া আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) সমগ্র চাকরিজীবনে একটি গুরুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি ওসি হিসেবে পদায়নের অযোগ্য হবেন। ওসি হিসেবে সর্বোচ্চ চারটি থানা বা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করলে (যেটি আগে ঘটে) পরবর্তীতে তিনি আর ওসি হিসেবে পদায়নের জন্য বিবেচিত হবেন না। আবার টানা ৩ বছরের বেশি কোনো ইন্সপেক্টর একই থানায় ওসি হিসেবে থাকতে পারবেন না।
নীতিমালা বলছে, ওসি হিসেবে পদায়নে ফিস্টলিস্টভুক্ত হওয়ার পর পিএসএমসি সম্পন্ন করাতে হবে। কোনো কর্মকর্তাকে ওসি হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে তাঁর প্রশিক্ষণের ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে; ওসি পদায়নের জন্য পিইটিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত প্রয়োজন নেই, তবে ফিটলিস্টভুক্ত করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের শারীরিক সক্ষমতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ওসি হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে বিগত ৫ বছরের এসিআরে গড়ে ন্যূনতম ৮০ নম্বর থাকতে হবে। বিগত ৩ বছরের এসিআরে কোনো ‘বিরূপ মন্তব্য’ থাকলে পদায়নের অযোগ্য বিবেচিত হবে।