গণভোট হবে যে ৪টি বিষয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৪ নভেম্বর) : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, ভোটাররা চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবেন।

গণভোট কখন হবে—নির্বাচনের আগে না নির্বাচনের দিন—এই প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মাধ্যমে সেই অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট—দুই বিষয়েই সিদ্ধান্ত জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে ভোট দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে সংস্কারের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে না; বরং এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও “উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী” করে তুলবে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, আজ উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদিত হয়েছে, যা এখন গেজেট প্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে।

গণভোটের সময়সূচি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিল রাজনৈতিক দলগুলো। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল এবং তাদের দাবি না মানলে ১৬ নভেম্বর থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল।

অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে অনড় ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে নজর ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জনগণ চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে ভোট দেবেন।

যে প্রশ্নে গণভোট হবে

তিনি আরও জানান, গণভোট আয়োজনের জন্য যথাসময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে এবং ব্যালটে উল্লিখিত চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই সেই প্রশ্ন তৈরি করা হবে।

প্রশ্নটি হলো, ‘‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’’

চারটি বিষয়ের ওপর প্রশ্নটি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

১. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

২. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

৩. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

৪. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের মতামত জানাবেন।

তিনি জানান, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিগণ একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া, পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। যার মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।

‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’’ বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ