ইরানের ওপর আবারও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক এবিসি নিউজ, (২৮ সেপ্টেম্বর) : এক দশক পর প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ। মূলত যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পদক্ষেপের কারণেই নতুন করে আবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে দেশটি। প্রতিবাদে এরই মধ্যে ওই তিন দেশ থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে ইরান।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা তাসনিম ও অন্যান্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে তথ্যটি। আল-জাজিরার খবর বলছে, আজ রবিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে বৈশ্বিকভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু, সামরিক, ব্যাংকিং ও রপ্তানিমূলক খাতগুলো নিয়ে কেউ কাজ করতে পারবে না। ২৭ সেপ্টেম্বর ইরানের মুদ্রা রিয়ালের ব্যাপক দরপতন হয়। তেহরানের খোলা বাজারে ১ মার্কিন ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ১১ লাখ রিয়ালে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তার দেশের শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে। এ কারণেই এ চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘লক্ষ্য যদি হতো পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে উদ্বেগ নিরসন করা, তাহলে সেটি সহজেই করা যেত।’ ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইরানের সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতায় না আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে বলেও অভিযোগ করেন পেজেশকিয়ান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন চেষ্টা করেছিল ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি এড়াতে। তারা একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে নিয়ে এসেছিল। তবে মাত্র চারটি দেশ তাদের সে খসড়ায় সমর্থন দেয়। ফলে ইরানের ওপর আবারও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ তৈরি হয়। গত কয়েক দিনে ইরানও চেষ্টা করেছিল নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর। তবে দেশটির অন্তত দুটি প্রস্তাব পশ্চিমা শক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মাসখানেক আগেই ইরানকে সতর্ক করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের অভিযোগ, নিজেদের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে স্বচ্ছতা অবলম্বন করছে না ইরান।
এর আগে গত জুনে ইরান ও ইসরায়েল ১২ দিনের সংঘাতে জড়িয়েছিল পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। সে সময় ইরানের এক হাজারেরও বেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পরমাণু বিজ্ঞানীরাও ছিলেন। ইসরায়েলের হামলার পর একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রও হামলা চালায় ইরানে। জবাবে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ওই সংঘাতের পর অবসান হয়। তবে ওই সময়ের পর ইরান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির আর কোনো পরিদর্শককে নিজ দেশে প্রবেশাধিকার না দেওয়ার বিষয়ে অবস্থান নেয়। আইন পাস করে পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তবে গত শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি জানায়, ইরানের কিছু পরমাণু সাইটে চলতি সপ্তাহে পরিদর্শন আবারও শুরু হয়েছে। তবে সেসব সাইটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার কবলে পড়া সাইটগুলো রয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
মস্কোর ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক ফোরামে ইরানের পরমাণুবিষয়ক প্রধান মোহাম্মদ এসলামি আরও একবার জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের নিন্দা করেন। মূলত ইরানের পরমাণু সাইটগুলোতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলার নিন্দা না করার জন্য তাদের সমালোচনা করেন তিনি। সূত্র: আল-জাজিরা