‘মব’ করে সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ ‘জুলাই যোদ্ধার’ বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক (রংপুর), এবিসি নিউজ, (২২ সেপ্টেম্বর) : রংপুরে ‘মব সৃষ্টি’ করে জ্যেষ্ঠ এক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রোববার দুপুরে নগরীর কাচারিবাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও দৈনিক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত।
লিয়াকত আলী জানান, এনায়েত আলী ওরফে রকি ও তার লোকজন তুলে নিয়ে তাকে মারধর করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তার।
এদিকে সাংবাদিককে মারধরের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। তারা জানান, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় সোমবার বেলা ১১টায় রংপুরে মানববন্ধন করা হবে। জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে সেখানে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।
সাংবাদিক লিয়াকত আলী বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশনে অটোরিকশার লাইসেন্স প্রদানে দুর্নীতি-সংক্রান্ত একটি সংবাদ করায় আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে সন্ত্রাসী এনায়েত আলী ওরফে রকি ও তার লোকজন আমাকে মারধর করে নিয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং জোর করে ক্ষমা চাইতে বলে। আমি অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে এনায়েত আলী দাবি করেন, তিনি জুলাই আন্দোলনের একজন রাজবন্দী সৈনিক। আমাদের কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থার জন্য যদি সরকারি কোনো অর্থায়ন কেউ কোনো সাইড (দিক) দিয়ে করে, সেটাকে নিয়ে লেখালেখি করে জুলাই রাজবন্দীদের বা জুলাই নিয়ে বিকৃত করার কোনো দরকার কি কারও আছে?’
সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে তার দাবি, তাকে আপসে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো অসম্মান করা হয়নি।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উম্মে ফাতিমা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে, আমি মেনে নেব।’
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে একজনের নাম জানতে পেরেছি।
অন্যদিকে, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, বাদল একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর বিভাগের সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব। তাকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলন হবে।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, হামলার মাস্টারমাইন্ড সিটি করপোরেশনের সিইও। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
রংপুর সিটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক বলেন, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে, এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে এনে মারধর করা নজিরবিহীন ও চরম উদ্বেগজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই।