বাংলাদেশের সামনে ছন্দ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ
ক্রীড়া প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৫ অক্টোবর) : নতুন একটা সিরিজ শুরুর আগে যে আত্মবিশ্বাস লাগে, ওয়ানডে সিরিজ থেকে তা পেয়েছে কি বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নে উত্তর ‘হ্যাঁ’ হওয়ার কথা। বিশেষ করে শেষ ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে সাইফ-সৌম্যের ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্পিন সহায়ক কালো উইকেটেও তিন শ ছুঁই ছুঁই রান, অতঃপর স্পিন দংশনে ১১৭ রানেই শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রেকর্ড ১৭৯ রানে হারের পর বাংলাদেশ দল নিয়ে ক্যারিবীয় দলের কোচ ড্যারেন স্যামির অকপট স্বীকারোক্তি, ‘মানসিকতা ও স্কিলে বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে ভালো ছিল।’
স্যামির এই ‘ভালো’র সনদ ওয়ানডে সিরিজে। সেটা এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। আগামী পরশু চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যে সিরিজ খেলতে গতকাল ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে বন্দরনগরীতে গিয়ে পৌঁছেছে দুই দলই। সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বিকেলে বাংলাদেশ দল পৌঁছল চট্টগ্রামে।
ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে শেষ ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে সিরিজ জয়ের তৃপ্তি এখনই দলের মন থেকে মুছে যাওয়ার নয়। একপেশে ম্যাচে বড় জয় ‘আমরা পারি’র আত্মবিশ্বাসও দিয়েছে স্বাগতিকদের। কিন্তু চট্টগ্রামে আসন্ন সিরিজটি ভিন্ন সংস্করণের। আর এই সংস্করণে বাংলাদেশের চেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালো দল। আইসিসির টি-টোয়েন্টির দলগত র্যাঙ্কিং তা-ই বলে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একধাপ ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে ৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের তিন ধাপ ওপরে, ৬ নম্বর অবস্থানে ক্যারিবিয়ানরা।
শাই হোপ কী করতে পারেন, তিনি দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দেখিয়েছেন। বিরুদ্ধস্রোতে লড়াই করে জিতিয়েছেন দলকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তাঁকে নিয়ে আশায় স্যামি। মাত্রই শেষ হওয়া সিরিজে সফরকারী দলের ইতিবাচক দিক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে স্যামির উত্তর ছিল, ‘শাই হোপের ব্যাটিং। প্রতিবারই সে দলের
হাল ধরে রাখে, নেতৃত্ব দেয়।’ শাই হোপের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি উপযোগী রোমারিও শেফার্ড, গুডাকেশ মোটি কিংবা রভম্যান পাওয়েলরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে সিরিজ।
তবে নতুন সিরিজেও চেনা মাঠ, চেনা কন্ডিশনের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ঢাকার মতো কালো উইকেট চট্টগ্রামে টি-টোয়েন্টি সিরিজে থাকবে না, কিন্তু সেখানেও স্পিন বড় ভূমিকা রাখবে, তা আশা করা যায়। আর সেটা ধরে নিয়েই চোটের কারণে বাদ পড়া পেসার শামার জোসেফের বদলি হিসেবে কোনো পেসার না নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার খ্যারি পিয়েরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর মিরপুরে যাঁদের স্পিনে বেশি ভুগতে হয়েছে সফরকারী দলকে, তাঁদের নিয়েই তো টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
চেনা কন্ডিশনের সঙ্গে ছন্দে থাকাটাই এই মুহূর্তে বড় শক্তি বাংলাদেশের। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সাইফ হাসান ও রিশাদ হোসেন। সিরিজ জয়ের পর রিশাদকে মেহেদী হাসান মিরাজ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এভাবে, ‘২-৩ বছরে সে এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে, যা দলের জন্য একটা আশীর্বাদ। সাধারণত আমরা লেগিদের খেলাতে চাই না। বোলিংয়ে এবার তাঁর নিয়ন্ত্রণটা অনেক ভালো ছিল। বিদেশি লিগে (পিএসএল) খেলে সে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।’
আর সাইফও ক্রমে দলের নির্ভরতা হয়ে উঠছেন বলে মনে করেন মিরাজ, ‘অনেকে মনে করেছে, সাইফ টেস্ট খেললে ওয়ানডে খেলতে পারবে না। আমার মনে হয় এটা ঠিক না। সে টি-টোয়েন্টিতে যেভাবে খেলেছে, ওয়ানডেতে যেভাবে খেলল, তাতে সে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। এটা ধরে রাখতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে।’
আসলে দল চূড়ান্ত করার একটা প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে বাংলাদেশ। মিরাজ যেমন বললেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের আগে এভাবে খেলাতে চাই, যেন বোঝা যায় কোন পজিশনে কে ভালো করছে। তবে দিন শেষে পারফরম্যান্স খুবই জরুরি।’ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও রিশাদ-সাইফের কাছে ভালো পারফরম্যান্সের আশা সবার।
নতুন সিরিজে নেতৃত্বে থাকা লিটন দাস মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছেন। সাইড স্ট্রেইনের চোটের কারণে এশিয়া কাপে দলের শেষ দুটি ম্যাচে না খেলা লিটন সিরিজের মধ্যেও মিরপুরে অনুশীলন করে গেছেন। শুধু নেতৃত্বে ফেরাই নয়, মাঠেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান তিনি; গত কিছুদিনের অনুশীলনে তাঁর নিবেদন সেটাই পরিষ্কার করে দিয়েছে।
