নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার মধ্যরাতে ইলিশ আহরণে নামবেন জেলেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক (চাঁদপুর), এবিসিনিউজবিডি, (২৪ অক্টোবর) : মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ শুরু হবে। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে (গত ৩ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত) ২২ দিন নদীতে ইলিশ আহরণ বন্ধ রেখেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টায়। সেজন্য নদীতে মাছ আহরণের জন্য জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাঁদপুরে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌসীমানায় ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে শনিবার মধ্যরাতে মাছ আহরণ করতে নদীতে নামবেন। তবে মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা জেলেরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, অভিযানকালে অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এবার জেলা টাস্কফোর্স ৩৯৯টি অভিযান, ৫৪টি মোবাইল কোর্ট, ৬৩টি মামলা ও ৮৭ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। পাশাপাশি ৫ লাখ ৩৪২ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে এবং ১০০৫ মেট্রিক টন ইলিশ আটক করে গরিব-দুস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূল এলাকায় অধিকাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা অধিকাংশই গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করেন। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করায় তাদের আটক করে মামলা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ২২ দিন বেকার থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, আনন্দ বাজার, রনাগোয়াল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জাল ও নৌকা মেরামতের কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ সময় শাহজান মাঝি ও আনোয়ার মাল বলেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দেয় তা আমরা মানি। তবে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকার কিছু অসাধু জেলে এসে অনেক মাছ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা মাছ পাই না। আমাদের ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর নিষেধাজ্ঞা সময়কালে যে পরিমাণ খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখনকার বাজারের যে অবস্থা, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানো আমাদের অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এবার তা অনেকটাই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারে নাই। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি। দেখা যাক অভিযান শেষে কী পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র বলেন, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে মিঠাপানিতে ছুটে আসে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স তা সর্বাত্মক সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণ ইলিশ কিনে খেতে পারবে।
