রুচিবোধের প্রকাশ ঘটবে যে অভ্যাসে

লাইফস্টাইল ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৪ অক্টোবর) : পোশাকের কিছু ছোট ছোট বিষয় একজন মানুষের রুচি, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান অন্যের সামনে তুলে ধরে।

ইংরেজিতে একটা প্রচলিত কথা আছে, ‘মানি টকস’ অর্থাৎ টাকা কথা বলে। আসলেই কি এই কাগজের টুকরা কথা বলে? একেক মানুষের কাছে আছে এর একেক রকম উত্তর। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই উপলব্ধি করে না যে টাকার পাশাপাশি মানুষের পরিহিত পোশাকের ধরন ফিসফিস করে কথা বলে। এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা কোনো লোগো বা ডিজাইনার ব্র্যান্ডের পোশাক না পরেই অবিশ্বাস্যভাবে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন।

আবার অনেকে আছেন দামি ব্র্যান্ডের পোশাকেও নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপনযোগ্য করে তুলতে পারেন না। এখানেই শুরু হয় রুচিবোধ আর ফ্যাশনবিষয়ক জ্ঞানের আলোচনা।

বিষয়টি ট্রেন্ডের পেছনে ছোটা বা সেলিব্রিটিদের স্টাইল নকল করা নয়, বরং সূক্ষ্ম বিষয়। এই ছোট ছোট বিষয় একজন মানুষের রুচি, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান অন্যের সামনে তুলে ধরে। তাই অনেক বেশি খরচ না করেও নিজেকে আকর্ষণীয় করে অন্যের সামনে তুলে ধরা ‘আর্ট’ হিসেবে পরিচিত।

নিখুঁত মাপ

ভালো ফিটিংয়ের পোশাকে একধরনের আকর্ষণ থাকে। আপনার পরনে যদি কম দামের কিন্তু ভালো ফিটিংয়ের একটি টি-শার্টও থাকে, তাহলেও আপনাকে মানানসই দেখাবে। উল্টোটাও সত্য যে কয়েক হাজার টাকার মাপ ভুল হওয়া ব্লেজারও যদি আপনার গায়ে থাকে, তবে সেই ‘দামি’ হওয়ার ধারণাটি তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যায়। তাই আপনার সাধারণ পোশাক, যেমন টি-শার্ট বা লিনেনের শার্টও টেইলার্সের কাছে নিয়ে যান। কাঁধ বা অন্যান্য জায়গায় সামান্য পরিবর্তন করলেই তা হাই-এন্ড বুটিকের পোশাকের মতো দেখতে পারে।

বিখ্যাত লোগো না রেখেও আত্মবিশ্বাসী থাকুন

অনেকে মনে করেন, দৃশ্যমান ব্র্যান্ড বা লোগোই স্ট্যাটাস প্রকাশ করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সংযমই আত্মবিশ্বাস। পোশাকে কোনো লোগো না থাকা বা খুব কম থাকা বোঝায় যে আপনার কিছু প্রমাণ করার দরকার নেই। যাঁরা ‘মনে মনে ধনী’, তাঁদের পোশাক লোগো দিয়ে বিচার করতে হয় না। তাঁরা পরিচিত হওয়ার জন্য পোশাক পরেন না, বরং সম্মানিত হওয়ার জন্য পোশাক পরেন। একটি পুরোনো প্রবাদ আছে, যার বাংলা অর্থ, ‘টাকা চিৎকার করে, আর সম্পদ ফিসফিস করে।’ ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। আপনার ব্র্যান্ডিং যত বেশি নিরবচ্ছিন্ন হবে, আপনার পোশাক তত বেশি উদ্দেশ্যমূলক ও ব্যয়বহুল মনে হবে।

নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন রঙের উপস্থিতি

আপনি কি লক্ষ করেছেন, বিলাসবহুল পোশাকের কালেকশনগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট রঙের চারপাশে ঘোরাফেরা করে? যেমন বেইজ, কালো, সাদা, নেভি, অলিভ ও ধূসর। কিংবা মার্ক জাকারবার্গকে কখনো রঙিন পোশাকে দেখেছেন? বরং একটা নির্দিষ্ট রঙের টি-শার্ট পরেই তিনি সব সময় স্টেজে কথা বলেন। নিরপেক্ষ টোন বা নিউট্রাল রংগুলো শান্ত ও সংযম প্রকাশ করে। এই দুটি বৈশিষ্ট্য আমরা অবচেতনভাবে ক্ষমতা ও সম্পদের সঙ্গে সংযুক্ত করি। উজ্জ্বল রং চমৎকার লাগতে পারে, কিন্তু তারা প্রায়ই ট্রেন্ডি হয়, ক্ল্যাসিক নয়। নিউট্রাল রং পরা মানে বিরক্তিকর হওয়া নয়। এর মানে আপনি স্থায়িত্ব বোঝেন। আপনি যদি ফরেস্ট গ্রিন বা হালকা গোলাপির মতো একটি স্টেটমেন্ট রংও যোগ করেন, তবে বাকি পোশাকটিকে সংযত রাখলে তা বিশৃঙ্খল না হয়ে সুচিন্তিত বলে মনে হবে।

অনুভবযোগ্য মানসম্পন্ন ফ্যাব্রিকস

দামি দেখানোর জন্য পোশাকের একটি নিজস্ব টেক্সচার বা বুনন থাকে। এটি চকচকে উপায়ে নয়, বরং স্পর্শযোগ্য উপায়ে উপস্থিত হয় মানুষের সামনে। লিনেন প্রাকৃতিকভাবে ভাঁজ হয়ে ঝুলে থাকে। তবে এটি নরম কিন্তু সুগঠিত তুলা দিয়ে তৈরি। উলের কাপড় ঘন, কিন্তু খসখসে নয়। কাপড়টি কীভাবে নড়ে, তা দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন, পোশাকটি কতটা দামি। সিনথেটিক ফাইবারগুলো শরীরকে আঁকড়ে ধরে এবং সহজে কুঁচকে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানগুলো স্বচ্ছন্দে প্রবাহিত হয়। মানের জন্য বেশি খরচ করা জরুরি নয়। আপনাকে জানতে হবে মানের অনুভূতি কেমন। ওজন ও বুনন চিনতে পারলে আপনি ব্যবহৃত কাপড় দেখেই তার গুণাগুণ বুঝতে পারবেন।

ত্রুটিহীন সাজসজ্জা ও রক্ষণাবেক্ষণ

বিষয়টি শুধু পোশাক নিয়ে নয়, কিন্তু এটি অনেক কিছুর বেলাতেই সত্য। আমরা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকাকে সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করি। যেমন একটি ভাঁজহীন ইস্তিরি করা শার্ট। এক জোড়া পুরোনো কিন্তু পরিষ্কার জুতা, কিংবা পরিপাটি নখ, গোছানো চুল, সতেজ নিশ্বাস। আপনি কী কিনছেন, তার মধ্যে সব সময় সম্পদ থাকে না। সম্পদ থাকে আপনার যা আছে তার প্রতি আপনি কতটা যত্নশীল, তার মধ্যে। আপনার পোশাক ইস্তিরি করতে, জুতা পরিষ্কার করতে এবং ছেঁড়া ফিতা বা নিস্তেজ বোতামের মতো ছোট বিষয়গুলো পরিবর্তন করতে সময় নিন। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো আত্মসম্মানের সংকেত দেয়। এগুলোকেই মানুষ আপনার আত্মবিশ্বাস হিসেবে পড়বে। আর জানেন তো, আত্মবিশ্বাসকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সুচিন্তিত অ্যাকসেসরিজ

অ্যাকসেসরিজ হলো স্টাইলের বিরামচিহ্ন। তারা হয় আপনাকে সম্পূর্ণ করবে, অথবা আপনাকে সম্পূর্ণভাবে বিশৃঙ্খল করে তুলবে। একটি একটি ভালো ঘড়ি, চামড়ার ব্রেসলেট বা মিনিমালিস্ট সানগ্লাসের মতো সাধারণ জিনিস আপনার পুরো সাজকে উন্নত করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো সংযম ও ধারাবাহিকতা। একটি দারুণ মানের জিনিস সব সময় কয়েকটি ট্রেন্ডি জিনিসের চেয়ে ভালো দেখাবে।

সঠিক জুতা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ

মানুষ অবচেতনভাবে প্রথম যে জিনিসগুলো লক্ষ করে, জুতা তার মধ্যে অন্যতম। আপনি বেশি দামের পোশাক পরতে পারেন। কিন্তু আপনার জুতা যদি নোংরা বা পুরোনো হয়, তবে আপনার লুকে ছেদ পড়ে যাবে। অন্যদিকে, পরিষ্কার, ভালো ভাবে যত্নে রাখা জুতা সাশ্রয়ী ব্র্যান্ডের হলেও আপনার পুরো পোশাক উন্নত করে তুলতে পারে।

পোশাকের স্তরবিন্যাস

লেয়ারিং বা স্তরে স্তরে পোশাক পরা একটি শিল্প। সঠিকভাবে করা হলে এটি আভিজাত্য প্রকাশ করে। যেমন একটি বোনা সোয়েটারের নিচে একটি কড়কড়ে শার্ট, সঙ্গে একটি হালকা ট্রেঞ্চ কোট বা একটি খোলা ওভারশার্টের নিচে একটি সাধারণ টি-শার্ট। এটি আপাতদৃষ্টে সাধারণ দেখালেও এর জন্য সামান্য কৌশল প্রয়োজন। লেয়ারিং করার সময় কেবল রং নয়, টেক্সচার বা বুননের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। ম্যাট কাপড়ের সঙ্গে নরম চকচকে টেনসেল বা সাটিনের মতো কাপড় যোগ করুন। এটি সূক্ষ্ম আকর্ষণ তৈরি করে রুচিশীলতার ইঙ্গিত দেবে।

শান্ত দেহভঙ্গি ও অঙ্গবিন্যাস

পোশাক আপনাকে কেবল একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই নিয়ে যেতে পারে। আপনার দেহভঙ্গি তার সঙ্গে মানানসই না হলে আপনি ব্যর্থ। যাঁরা নীরব আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, তাঁরা সোজা হয়ে দাঁড়ান, ধীরে ধীরে চলাফেরা করেন এবং অস্থির হন না। তাঁরা তাড়াহুড়ো করেন না বা ক্রমাগত তাঁদের পোশাক ঠিক করেন না। তাঁদের উপস্থিতি স্থিতিশীল মনে হয়। আপনি এটি অনুশীলন করতে পারেন। ঘরে প্রবেশ করার পর কথা বলার আগে এক সেকেন্ড থামুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। আপনার অঙ্গভঙ্গি কম ও শিথিল রাখুন।

সূত্র: ভেজ আউট

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ