প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা: ফ্যাশনে মনের অসুখ

লাইফস্টাইল ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৩ অক্টোবর) : কোনো কারণ ছাড়াই অনেকে শপিং মলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। বাজারে নতুন কী এল, সেগুলো দেখার আগ্রহ মানুষের বরাবরই। কিন্তু সেই প্রবণতার বাইরে এই ঘোরাঘুরির বড় কারণ, প্রয়োজন নেই, তবু হুট করে জামা, জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি কিনে ফেলা। শুনলে রাগ করতে পারেন অনেকে। অপ্রয়োজনীয় এই কেনাকাটা একধরনের মানসিক রোগ। ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানীরা এই কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছেন হোল্ডিং ডিজঅর্ডার।

প্রয়োজনীয় পোশাক কিংবা জিনিসপত্র অবশ্যই কিনতে হবে। কিন্তু এই যে বাড়তি কেনাকাটা, যেগুলো হয়তো জীবনে একবারও গায়ে তুলবেন না কিংবা ব্যবহার করবেন না। এর ফলে সংকট শুরু হয়। তা শুধু অর্থনৈতিক নয়, তার চেয়েও ব্যাপক।

কেনাকাটা হিসাব করে হয় না—এ কথা যাঁরা বলেন, পরিবেশবিদেরা তাঁদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জানাচ্ছেন, চাইলেই আপনার পক্ষে সব সম্ভব। প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার করা পোশাক থেকে প্রতিটি জিনিস যদি পরিবেশবান্ধব হয়, তাহলে সম্পদের অপচয় কম হয়। বিষয়টি যদি নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে জীবন হয় সহজ।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাওয়াত কিংবা অনুষ্ঠানে পরার জন্য কেনা ফ্যান্সি পোশাকটি জীবনে সাধারণত একবারের বেশি কাউকে পরতে তেমন দেখা যায় না। এ কারণে অর্থ ও আলমারিতে জায়গা—দুটোই নষ্ট হয়। আজকাল একটি পোশাক পরে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার পর, সেই পোশাক দ্বিতীয়বার পরতেও হয়তো ইতস্ততবোধ করেন অনেকে। প্রদর্শনবাদীদের দিকে আঙুল তুলে এখন দেশখ্যাত অনেক নামী তারকাও কিন্তু এর বড় জবাব দিচ্ছেন। যার সারমর্ম হলো, একটি কাপড় একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় পরে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ২০২৫ সালে এসেও একই পোশাক একাধিকবার পরা নিয়ে লোকে কী বলবে, সে কথা না ভেবে বরং উপযোগিতা বুঝে কেনাকাটা করার কথা ভাবা যেতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন।

তাই আপনারও যদি পোশাকের ব্যাপারে হোল্ডিং ডিজঅর্ডার থাকে, তাহলে এখন থেকে এ বিষয়ে মুক্তি পেতে কেনাকাটার সময়ই কিছু বিষয় মনে রাখুন।

যেসব বিষয় মনে রাখবেন

উপযোগিতা

শপিং মলে গিয়ে কোনো ফ্যান্সি পোশাক পছন্দ হলে কেনার আগে যাচাই করে নিন, এটি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে পরার মতো পোশাক কি না। এই প্রিয় পোশাক এক দিন ব্যবহার করার পর একেবারে বাক্সবন্দী করার চেয়ে বেশ কয়েকবার পরার ছুতো বের করা গেলে সব দিক থেকে ভালো হয়।

টেকসই কাপড়ে তৈরি পোশাক

পছন্দের পোশাকটির ব্যবহার উপযোগিতা বাড়ানো অথবা সংরক্ষণ—উদ্দেশ্য আপনার যা-ই হোক না কেন, টেকসই তন্তু দিয়ে তৈরি কাপড় বাছাই করা খুব জরুরি। যেমন সুতি, সিল্ক, জামদানি অথবা স্থানীয় তাঁতিদের হাতের যত্নে বিশেষভাবে বোনা যেকোনো তন্তুর শাড়ি। তাতে থাকতে পারে সুতা কিংবা কাঠ, মাটি কিংবা বীজের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ। এটি যেমন পরিবেশবান্ধব ভাবনা, তেমনি এই কাপড়গুলোর আমেজ বছরের পর বছর একই থাকে।

দামের চেয়ে গুণমান যাচাই জরুরি

একাধিকবার পরার জন্য মানসম্পন্ন কাপড়ে তৈরি পোশাক কেনা মোটেই কোনো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা নয়। জম্পেশ একটা শপিং করে নানা ধরনের কাপড়ের বিশাল সংগ্রহ জমা করার চেয়ে ভালো মানের প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। এই কাপড়গুলোই পরে একাধিক অনুষ্ঠানে পরা যেতে পারে। আবার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখেও দেওয়া যায়। মূল্যমান ও আবেগ—দুটোকে ধারণ করতে এই পোশাকগুলোর জুড়ি নেই।

যত্ন নেওয়া কতটা সহজ

প্রিয় পোশাকটি কীভাবে সংরক্ষণ করে রাখবেন, সেটা ভেবে রাখা খুব জরুরি। কিছুটা বাতাস চলাচল করতে পারে, এমন একটা আবরণে মুড়িয়ে সহজে ওয়ার্ডরোবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, এমন কাপড়ই কেনা ভালো। সঙ্গে এর রং টেকসই হওয়া জরুরি। এতে যত দিন সংরক্ষণ করা হোক না কেন, পোশাকের আবেদন বাড়া ছাড়া কমবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ