ভৈরবে অর্থ ও মাদকসহ চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার আটক

জেলা প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
কিশোরগঞ্জ (২৬ অক্টোবর ২০১৮) : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও মাদকসহ এক জেলারকে আটক করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রেন থেকে তাঁকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম কারাগারে কর্মরত ওই জেলারের নাম সোহেল রানা বিশ্বাস। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী আন্তনগর বিজয় এক্সপ্রেসে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন।

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. মজিদ জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ভৈরব স্টেশনে অবস্থান নেয়। বিজয় এক্সপ্রেস ১২টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। জেলার সোহেল রানা ট্রেনের কেবিনে ছিলেন। সেখানে তল্লাশির একপর্যায়ে তাঁর দুটি ব্যাগ থেকে থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। পরে সোহেল রানাকে আটক করে ভৈরব রেলওয়ে থানায় আনা হয়।

পুলিশ হেফাজতে সোহেল রানা জব্দ হওয়া টাকা বহন করার কথা পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেন। সোহেল রানা বলেন, তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের আর কে মিশন রোড। বাবার নাম জিন্নাত আলী বিশ্বাস। চাকরির বয়স প্রায় ১৮ বছর। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি এক বছর নরসিংদী কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

টাকার উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, পুরো টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাওয়া। ওই টাকার মধ্যে ৫ লাখ ছিল তাঁর। ট্রেনে ওঠার আগে বন্দীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন ঠিকাদার তাঁকে দিয়ে যান। বাকি টাকা চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক ও চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। সোহেল রানা বলেন, ১ নভেম্বর ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে জেলারদের নিয়ে সম্মেলন হবে। ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি তিন দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামেই থাকেন। কিন্তু সর্বশেষ দুই মাসের মাসোহারা তাঁর কাছ থেকে চট্টগ্রামে গ্রহণ না করে ঢাকায় নিয়ে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। তাঁদের নির্দেশমতো তিনি ওই টাকা বহন করছিলেন।

পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পেছনে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন সোহেল রানা। কারণ হিসেবে বলেন, ঘুষের টাকার লেনদেন নিয়ে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ব্যাগে পাওয়া মাদকদ্রব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, সম্ভবত সেই ঠিকাদার টাকার সঙ্গে ব্যাগে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে রেখে যান। ষড়যন্ত্রে ওই ঠিকাদারও অংশীদার থাকতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।

ওসি মজিদ জানান, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১ কোটি টাকা সোহেল রানার নামে। ১ কোটি আছে স্ত্রী হুসনে আরা পপির নামে। বাকি ৫০ লাখ করা আছে শ্যালক রাকিবুল হাসানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকে। চেকে দেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ছিল সোহেল রানার নামে। চেকের টাকা উত্তোলনের তারিখ ছিল চলতি মাসের ২৮ তারিখ। জব্দ চেক বইগুলো সোনালী, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল ও ব্র্যাক ব্যাংকের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ