এক পায়ের ফুটবল লিগ !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চীনের হে ইয়িইয়িকে স্মরণে আছে? সেই যে এক পায়ের ফুটবলার। চায়নিজদের আদরের ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’! ক্রাচের স্ট্রাইকারটি চীনে পেশাদার ফুটবল দূরে থাক, অপেশাদার ফুটবলেও খেলার সুযোগ পাননি!
সবার এক কথা, ওঁর ক্রাচের কারণে বাকিরা আঘাত পেতে পারে। আবার ওঁরাও কিন্তু প্রতিপক্ষের সামনে ‘সিটিং ডাক’—মানে, সহজ শিকার। তাই বলে, কেউ এক পায়ের ফুটবলার হতে পারবে না? ফুটবল খেলতে দুটি পা-ই লাগবে, এমন কথা কোথায় আছে?
আয়তাকার সবুজ গালিচার ভেতর সবাই সমান। তবে সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছি আমরাই। কেউ পারবে, কেউ পারবে না! মিসরের এক দল ফুটবলার সেই ‘পারবে না’দের দলভুক্ত। কারণ, পেশাদার কিংবা অপেশাদার ফুটবলে আমাদের বেঁধে দেওয়া ‘দো পেয়ে’ নীতির বেড়াজালে তাঁরা আটকা পড়েছেন। এক পায়ের ফুটবলার বলে কথা! তাই ব্যাপারটা ‘আলাদা’।
সবাই ভাগ্যের অট্টহাসির শিকার। বেশির ভাগই পা হারিয়েছে দুর্ঘটনায়। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা হারায়নি। তাই মিসরের আনাচকানাচ থেকে ২৫ জন ফুটবলার মিলে একটি দল গঠন করেছেন। ‘মিরাকল টিম’—এ নামকরণের সার্থকতা হলো, একটা দলের সবাই যদি এক পায়ের ফুটবলার হন, তাহলে তো সেটা ‘অলৌকিক দল’-ই!
কায়রোর এক মাঠে সপ্তাহে দুবার অনুশীলন চলে। প্রথাগত পেশাদার ফুটবলের অনুশীলন নয়, ফ্রি-স্টাইল ফুটবল। মানে, প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে গোল দেওয়াই লক্ষ্য কিন্তু ‘ফ্রি-স্টাইল’ ফুটবলে পুরোটাই শুধু বলের ওপর কলাকৌশল। সেই ২৫ ‘মুক্তছন্দে’র ফুটবলারের অভিযাত্রা এখানেই শেষ নয়। কেবল শুরু!
মিসরে শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’ ফুটবলারদের জন্য ওঁরা আলাদা একটি লিগ চালু করতে চায়। সে জন্য চাই আলাদা ফেডারেশন? কাজ চলছে; গোটা মিসর ছেঁকে শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’ ফুটবলারদের এক ছাতার তলে নিয়ে আসার কাজ। এরপর গঠন হবে ফেডারেশন, তারপর ঘরোয়া লিগ।
‘মিরাকল টিম’-এর অধিনায়ক মাহমুদ ইব্রাহিম তৌফিক। ২০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়েছেন। কিন্তু মনের ভেতর পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু আপাতত তা সম্ভব নয়। তবে তাঁর মতো বাকিদের একীভূত করে তো খেলা যায়? তৌফিক এ কাজটিই করেছেন। ‘ফ্রি-স্টাইল’ ফুটবল অনুশীলনের পরামর্শটা এসেছে তাঁদের কোচ ইউস্রাই মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছ থেকে। তৌফিকের ভাষ্য, ‘আমি সবাইকে একসঙ্গে করি, কোচ পরামর্শ দিয়েছিলেন ফ্রি-স্টাইল অনুশীলনের। কিন্তু তাঁকে বলেছি, আমার আরেকটি স্বপ্ন আছে। একদিন পেশাদার ফুটবলার হব।’
মিসরে মোট ২৭টি প্রশাসনিক অঞ্চল আছে। এর প্রতিটি অঞ্চলে শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’ ফুটবলারদের নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক দল গঠনের চেষ্টা চলছে বলে জানান ‘মিরাকল টিম’-এর কোচ ইউস্রাই। পথটা যে বন্ধুর, তা জানেন। তহবিলে টান এমনকি ফুটবল অনুশীলনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ক্রাচের অনটনও আছে! নিয়মিত অনুশীলনের মাঠ খুঁজে পাওয়াও চ্যালেঞ্জ।
পেশাদার ফুটবলের ছলাকলা নিয়মনীতি আমরা সবাই জানি। কিন্তু শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’দের ফুটবল খেলার ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি?
সাতজনের প্রতি দলে এক পায়ের হতে হবে সবাইকে। শুধু গোলরক্ষক হবেন এক হাতের। এ যেন দারুণ ভারসাম্য—যে অঙ্গ দিয়ে খেলতে হবে তাতে ঘাটতি থাকলেই না ‘অক্ষম’ ফুটবলার!
ক্রাচ দিয়ে বল ছোঁয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই। অফসাইড বলে কিছু নেই। বদলি খেলোয়াড় নামানো যায় যত খুশি। ভাবছেন, এত নিয়ম থাকলে প্রতিযোগিতামূলক আসর বসে না কেন? হ্যাঁ, শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’ ফুটবলারদেরও বিশ্বকাপ আছে। এবার যেমন মেক্সিকোতে বসবে বছরের শেষ দিকে। আয়োজনে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাম্পিউটি ফুটবল ফেডারেশন’।
তৌফিকদের লক্ষ্য যে সেই ‘অক্ষম’ বিশ্বকাপ—তা না বললেও চলে। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, ওঁরা কী সত্যিই অক্ষম? চিরকালীন ঘাটতি নিয়েও যাঁরা ছুটিয়ে বেড়ান স্বপ্নের ঘোড়া, তাঁরা আর যা-ই হোন ‘অক্ষম’ না!
