প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ, মুহিতের জবাব

bnimgরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণে বিশ্ব ব্যাংকের প্যানেলের প্রতিবেদনকে ‘অসম্পূর্ণ’ উল্লেখ করে জবাব পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
চিঠিতে তিনি ওই প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের যুক্তির অনুপস্থিতি এবং ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

গত ১১ জুন হাতে পাওয়া ওই প্রতিবেদনের জবাব নয় দিন পর বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্যানেলের প্রধান লুইস মোরেনো ওকাম্পোর কাছে পাঠান অর্থমন্ত্রী।

গত ১৮ জুন ওয়েবসাইটে বিশ্ব ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলায় মামলায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি না করায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

চিঠিতে মুহিত বলেছেন, “প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে এফআইআরে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে।… কিন্তু তাকে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের যুক্তি এতে (প্রতিবেদনে) উল্লেখ করা হয়নি।”

আবুল হোসেনকে আসামি করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়া এবং এই বিষয়ে অধিকতর তদন্তে দুদকের অবস্থানও তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

একবার ঋণচুক্তি বাতিল করলেও সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পদ্মা প্রকল্পে ফিরেছিল বিশ্ব ব্যাংক। তথন তারা দুদকের তদন্ত পর্যবেক্ষণে ওই প্যানেল গঠন করে।

ওই প্যানেলের তিন সদস্য দুদফা ঢাকায় এসে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাও করে গত বছরের ডিসেম্বরে অসন্তোষ নিয়ে ফিরে যান। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তারা প্রতিবেদন দেন, যা এই মাসে প্রকাশ করা হলো।
ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুহিত লিখেছেন, “আমি মনে করি, বিশ্ব ব্যাংক অন্যায় এবং অযৌক্তিকভাবে পদ্মা প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন বাতিল করেছিল। কিন্তু আপনারা যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, তাতে এই বিষয়টি যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি।”

প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা প্রকল্পে প্রথমে ১২০ কোটি ডলার ঋণ স্থগিত এবং পরে বাতিল করেছিল বিশ্ব ব্যাংক।

পরে তারা ফিরলেও দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে টানাপড়েনে তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে এগোচ্ছে সরকার, ইতোমধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।

ওকাম্পো নেতৃত্বাধীন প্যানেল তাদের প্রতিবেদন দেয়ার আগেই এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের ঘোষণা দেয় সরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের জন্য অপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে বলে মনে করেন বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

gimgমুহিত লিখেছেন, “গত বছরের ২৯ জুন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল, অপ্রয়োজনীয় এবং অযাচিত ছিল। অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়।”

বিশ্ব ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়ায় তা পুনর্বিবেচনায় সংস্থার প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ জানানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়ার সব সুযোগই তখন বন্ধ করা হয়েছিল। এনসএনসি লাভালিনকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পেতে কানাডাভিত্তিক এই কোম্পানি বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ঘুষ সেধেছিল বলে অভিযোগ ওঠার পরই তার তদন্ত শুরু হয়।

প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়টি তুলে ধরে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের প্রত্যাবর্তন পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমাদের বিরুদ্ধে যে কল্পিত অপবাদ দেয়া হয়েছে, তা খণ্ডন করে।”

চিঠিতে মুহিত লিখেছেন, “আপনাদের রিপোর্টে সারা বিশ্বে ঘুষ দিয়ে কাজ আদায়ের বিষয়ে অধুনা যেসব আইন-কানুন হচ্ছে, তার একটি বিবরণ দিয়েছেন।

পদ্মার হাল জানাতে বিবৃতি দেবেন মুহিত
“আমি সে বিষয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশেও ঘুষ দেয়ার প্রচেষ্টা করা একটি অপরাধ। এই সব অপরাধের বিচার কানাডা এবং বাংলাদেশে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুতরাং এজন্য আমাদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই তথ্যটিও প্রতিবেদনে আসা উচিৎ ছিল।”
বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে প্রকল্প এগিয়ে নিতে সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, “আমাদের ধারণা হল যে, এই তদন্ত জলদি শেষ হবে না। কিন্তু আমাদের জনগণ পদ্মা সেতুর আশু বাস্তবায়ন চায় “

পরবর্তী সরকার যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন চালিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রোববার ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের উপর সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, চার বছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।

বিশ্ব ব্যাংক প্যানেলের প্রতিবেদনের মতো এই চিঠিও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্টকে (ইন্টেগ্রিটি) অনুরোধ জানিয়েছেন মুহিত।

এই বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর চিঠি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ