অবহেলায় শিশুর হাত হারানোর ঘটনায় মামলা

Faridpur Map ফরিদপুর ম্যাপরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ফরিদপুরঃ ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুরে মুসলিম মিশন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশু সুমন কাজীর (১২) হাত হারানোর ঘটনায় মামলা করেছেন তার বোন।

গতকাল সোমবার ফরিদপুর এক নম্বর আমলি আদালতে শিশুটির বোন জোহরা বেগম বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনা থানায় যায়নি। থানায় গেলে এ ব্যাপারে তদন্তকাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুর বোন জোহরা বেগম বাদী হয়ে গত সোমবার ফরিদপুর এক নম্বর আমলি আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগে একমাত্র আসামি করা হয়েছে ফরিদপুর মুসলিম মিশনে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী সুকুমার প্রামাণিককে। আবেদনে সুকুমারকে ‘একজন ভুয়া চিকিত্সক, প্রতারক ও খুনি প্রকৃতির লোক হিসেবে’ অভিযুক্ত করে তাঁর (সুকুমার) শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

আদালতের বিচারিক হাকিম মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রি অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশনা আজ দুপুর পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় এসে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘এ নির্দেশনা এলে আমরা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করব।’

শিশু সুমনের ভগ্নিপতি রশিদ মাতুব্বর বলেন, ‘মুসলিম মিশনের তত্ত্বাবধায়ক মো. আলাউদ্দিন খান ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু এ প্রস্তাব আমাদের কাছে মনঃপূত না হওয়ায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’

সুকুমার প্রামাণিক বলেন, ‘এ ঘটনার পর মুসলিম মিশন কর্তৃপক্ষ আমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন। আমি ওই প্রতিষ্ঠানে একজন স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমার কোনো এমবিবিএস ডিগ্রি নেই। এ ছাড়া মুসলিম মিশন হাসপাতালেও কোনো এমবিবিএস চিকিত্সক কর্মরত নেই। আমি তুলা ব্যান্ডেজ দিয়ে সুমনের হাতটি ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করি, যাতে সে ব্যথা না পায়। ’

ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ সামাদ বলেন, ‘আমরা আপসের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শিশুটির পরিবার রাজি না হয়ে মামলা করেছে।’

সুমনের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দড়জা গ্রামে। তার বাবা কৃষক রহমান কাজী দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে বিধবা মা ছোবরননেছা চরম অভাব অনটনে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ জন্য তিনি তার ছোট ছেলে সুমনকে ফরিদপুর মুসলিম মিশন এতিমখানায় ভর্তি করে দেন।

গত ১২ জুন (বৃহস্পতিবার) দুপুরে জোহর নামাজের জন্য ওজু করতে গিয়ে পিছল খেয়ে পড়ে গিয়ে সুমনের ডান হাতটি ভেঙে যায়। মিশনের স্বাস্থ্য সহকারী সুকুমার প্রামাণিক সুমনের চিকিত্সা করেন। কিন্তু মিশন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভুল চিকিত্সার কারণে সুমন পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত ১৭ জুন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে অস্ত্রোপচার করে সুমনের ডান হাতটি কনুই থেকে কেটে ফেলতে হয়।।

প্রসঙ্গত গত ২০ জুন দৈনিক চারের পাতায় ‘অবহেলায় হাত হারাল শিশু’ শিরোনামে এ-সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ